দরবারে আউলিয়া মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফ
মাহতারাম আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু । অগণিত হামদ এবং শোকরানা সেজদা পেশ করছি আল্লাহ্ রাব্বোল এজ্জতের বারেগাহে, অগণিত ছালাত ও ছালামের নযরানা নিবেদন করছি ছরওয়ারে দো’আলম নবীয়ে দোজাহাঁ হযরত মোহাম্মাদুর রাছুলোল্লাহ্ ছাল্লালাহু আলাইহে ওয়া ছাল্লামের নূরোন আলা-নূর কদমপাকে, অসংখ্য দরূদ, ফাতেহা ও এখলাছ এর নযরানা নিবেদন করছি হযরত শাহানশাহে ত্বরিকৎ কোতবোল এরশাদ ছোলতানোল আউলিয়া মাওহেদীন ওয়াল কামেলীন ও আশেকীন হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী আহম্মদ আলী জানশরীফ শাহ্ বাবা সুরেশ্বরী (রঃ) এর খেদমতে। আমাদের ক্বেবলায়ে দিল, ক্বাবায়ে জান, মোর্শেদে বরহক্ মাওলানা শাহ্ সূফী বাবা জালাল নূরী ক্বেবলায়ে ক্বাবা (রঃ) এর নূরী পাক চরণে অগণিত ছালাম, দরূদ ও ফাতেহার নযরানার সাথে ভক্তি নিবেদন করছি তাঁর অফুরন্ত এনায়েতের জন্য।
শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী
মোন্তাজীমে গদীনশীন মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফ, নড়িয়া, শরীয়তপুর।
সভাপতি– আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ।
খানকায়ে সুরেশ্বরী
খাজা সুপার মার্কেট, চকবাজার।
সাপ্তাহিক মাহফিলঃ বাদ আসর, প্রতি বৃহঃস্পতিবার ।
- যেভাবে যাবেন
বাগে সুরেশ্বরী
কুচিয়ামারা, কেরানিগঞ্জ।
মাসিক মাহফিলঃ বাদ আসর, প্রতি মাসের ৯ তারিখ ।
- যেভাবে যাবেন
সুরেশ্বরী নূরী জালালিয়া আস্তানা শরীফ
সুরেশ্বর, শরীয়তপুর
- যেভাবে যাবেন
হযরত গাউছে আজম শাহানশাহে বাগদাদী (রহঃ) ও হযরত খাজায়ে খাজেগা শাহানশাহে চিশ্তী আজমেরী (রহঃ) রূহানীয়াত কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত অনির্বাণ প্রদীপ ও হযরত এবনে আরাবী প্রকাশিত তৌহীদের জ্ঞানধারা হযরত জালাল উদ্দিন রুমী (রহঃ) হযরত ফরিদউদ্দিন আত্তার (রহঃ) এবং হযরত বু-আলী শাহ্ কলন্দর (রহঃ) ও হযরত শামছে তাবরেজের রূহানী- বাঁশরী এবং ইসলামী তাছউফ সাগরের মহামূল্য রত্নরাজী আহরণকারী ডুবুরী হযরত খিজির (আঃ)-এর ছিনার ইলমে লাদুনী লাভকারী আউলীয়া কুল-গৌরব রবি হযরত মাওলানা শাহ্ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা কুদ্দুছুছ র্ছিরাহু হযরত শাহ সূফী মেহেরউল্লাহ্ (রহঃ) এর ঔরসে বাংলা ১২৬৩ সনে ২রা অগ্রহায়ণ ভূমিষ্ঠ হয়ে ধরাকে ধন্য ও সুরেশ্বরকে তীর্থভূমিতে এবং সুরেশ্বরের মাটিকে খোদা প্রেমিকগণের চোখের সুরমাতে পরিণত করেছেন। এ সুরেশ্বর গ্রাম আধ্যাত্বিক রাজ্যেও কুতুবুল এরশাদ হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা (রহঃ) আগমনে জগতে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। সুলতানূল আউলীয়া, কুতুবুল এরশাদ হযরত শাহ সূফী মাওলানা আহমদ আলী ওরফে হযরত মাওলানা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী নূরোল্লাহে (রহঃ) সর্বত্র আপামর জনসাধারণের নিকট হযরত সুরেশ্বরী নামেই সুপরিচিত ও প্রখ্যাত হয়ে আছেন।
বেলায়েত গগণের মধ্যাহ্ন সূর্য হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা (রহঃ) পিতা হযরত শাহ্ সূফী মেহেরউল্লাহ্ শরীফ (রহঃ) দেশ-দেশান্তরে সূফী সাহেব নামে প্রখ্যাত ছিলেন। কঠোর রেয়াজতকারী সাধক হযরত সূফী সাহেব সর্বত্র আবালবৃদ্ধ বণিতার নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি ছিলেন এবং এখনও মানুষ তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। কথিত আছে, সূফী সাহেবের গাভী অপরের ক্ষেতের গাস বা ফসলাদি ভক্ষণ করলে, তিনি তিন দিন যাবত ঐ গাভীর দুগ্ধ পান করতেন না এবং পরিবারের কাউকেও তা পান করতে দিতেন না। গাভীর দুগ্ধ দোহন করে যার ক্ষেতের ঘাস বা ফসল খেয়েছে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি অত্যন্ত সাধারণ আহার করতেন, সারা জীবন তিনি এক প্রকার ব্যঞ্জন দ্বারা আহার করেছেন! এ সূফী সাধক ১১০ মতান্তরে ১২০ বৎসর বয়সে এন্তেকাল করেন।
জনাব কাজী শুকুর সাহেবের কন্যা হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বার আম্মা সাহেবা অতিশয় ধর্মপরায়ণা ও আদর্শস্থানীয়া নারী-কুল গৌরব ছিলেন। যে মহিয়ষী নারী বেলায়েত গগণের পূর্ণ চন্দ্র; মারেফত রাজ্যের কুতুবুল এরশাদ নূরে এলাহীর চিরোজ্জ্বল প্রদীপকে গর্ভেধারণ করেছেন, তাঁর আম্মা সাহেবা অভূতপূর্ব স্বপ্ন দর্শন করতেন। একবার হযরত মাওলায়ে দো’আলম নবী সম্রাট বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) স্বপ্নে তাঁকে দর্শন দান করে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের “কুতুবুল এরশাদ” হওয়ার সুসংবাদ প্রদানে তাঁকে দোজাহানের সৌভাগ্যরাণী করেছিলেন।
বিস্তারিত পড়ুন>
অনাগত ভবিষ্যতের শরিয়ত ও মা’রেফতের মহাকাশ জুড়িয়া যাহার বিচরণ ক্ষেত্র হইবে, সেই মহামানব, মা’শুকে মাহবুব হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ)-র পৃথিবীতে আগমনের মহাবার্তা সকলের অজানা থাকিলেও তাঁহার নারীকুল আদর্শ স্থানীয়া মহীয়সি মাতা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অসীম কৃপায় গর্ভাবস্থাতেই সুসংবাদ প্রাপ্ত হইয়া ছিলেন। তাঁহার গর্ভস্থ সন্তান যে পৃথিবীতে আগমন পূর্বক একজন মহামানব তথা একজন মহান আউলিয়া হইবেন এবং যাঁহার সংস্পর্শ ও উছিলায় পথ ভ্রষ্ঠ মানুষ পথের সন্ধান লাভ করিবে, নিস্প্রভ মনের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হইবে, ধর্মের বিকৃত রাহুগ্রাসে আক্রান্ত ভয়াবহ তিমিরাচ্ছন্নতা হইতে সমাজ মুক্তি লাভ করিবে এবং ধরণী আল্লাহর ইশ্ক তথা প্রেমে জাগিয়া উঠিবে তাহা তিনি বিভিন্নভাবে এবং বহুবার জ্ঞাত হইয়াছিলেন।
বর্ণিত আছে, সুরেশ্বরী বাবা মাতৃগর্ভে থাকাকালে মাওলায়ে দো’আলম, সৃষ্টির সূত্র নবী সম্প্রাট হুজুর পূরনুর আহাম্মদ মোজতাবা মোহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) স্বপ্নে তাঁহার মাতাজান ক্বিবলাকে গর্ভস্থ সন্তানের কোতবেএরশাদ হওয়ার সুসংবাদ জানাইয়াছিলেন। হযরত খাজা খেঁজের (আঃ) স্বপ্নে তাঁহাকে জানাইয়াছিলেন যে গর্ভস্থ সন্তান তাঁহার বন্ধু এবং মারেফত গগনের পূর্ণ রবি হইবেন। হযরত মুসা কলিমুল্লাহ্ ও তাঁহার গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে অনুরূপ সুসংবাদ জানাইয়াছেন। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় তিনি দো’জাহানের নারীকুল শিরমণি হযরত মা ফাতেমা (রাঃ), সর্দারে আউলিয়া গাউসুল আযম হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ), সুলতানুল হিন্দ খাজায়ে খাজেগা গরীবে নেওয়াজ খাজা মাইনুদ্দীন চিশ্তী (রাঃ), হযরত বাহাউদ্দিন নকশেবন্দী (রাঃ) স্বপ্নে তাঁহার গর্ভস্থ সন্তানের জগদ্বিখ্যাত আউলিয়া হইবার সুসংবাদ জানাইয়া ছিলেন। ইহা ছাড়াও তিনি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা গর্ভে থাকা কালিন বড় বড় অলি আউলিয়া আম্বিয়া (আঃ) দেরকে স্বপ্নে দর্শন করিতেন। একদা তিনি স্বপ্নে দেখিয়াছিলেন যে আকাশের পূর্ণচন্দ্র তাঁহার কোলে উদয় হইতেছে।
সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হইল যে, বাবা জানুর জন্মের সময় তাঁহার মাতা স্বাভাবিক প্রসব বেদনা টুকুও অনুভব করেন নাই। বাবা জানু ভূমিষ্ঠ হইবার সঙ্গে সঙ্গেই আপন গর্ভের মা’রেফত রবিকে স্বাগত জানাইবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষয়মান মহীয়সি মাতা আবেগের আতিশয্যে বিসমিল্লাহর সহিত শুকরিয়া আদায় করিয়া সন্তানের হেফাজতের জন্য মোনাজাত করিলেন।
অতঃপর বড় বড় আম্বিয়া (আঃ), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এবং উঁচুস্তরের অলি গণের ভবিষ্যত বাণী সমূহকে শিরতাজ করিয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানবকুলের মুক্তি পথের দিশারী হইয়া আল্লাহ্ পাকের সীমাহীন মেহেরবাণীতে বাংলা ১২৬৩ সনের ২রা অগ্রহায়ণ সোমবার সোবহে সাদেকের সময় ভুবন আলোকিত করিয়া বাবা জানু মাতৃক্রোড়ে আগমন করিলেন।
প্রায় তিনশত বৎসর পূর্বে সাবেক ফরিদপুর বর্তমান শরিয়তপুর জেলায় অর্ন্তগত বাংলার স্বাধীন বারো ভূইয়ার অন্যতম রাজা কেদার রায়ের রাজধানী শ্রীপুর সংলগ্ন ঈসাপাশা গ্রামে আরব চাঁন মৃধা নামে জনৈক ভূস্বামী বাস করিতেন। একদিন প্রবল ঝড় তুফান প্রবাহিত হইবার পর এলাকার ক্ষতি দেখিবার জন্য তিনি পদ্মার তীরে আগমন করেন এবং ঘুরিয়া ঘুরিয়া ঝড়বিধস্ত অবস্থা অবলোকন করিতে থাকেন। হঠাৎ নদী তীরস্থ ঝড়ে বিধ্বস্ত একটি শিমূল গাছ হইতে একটি শিশুর ক্রন্দন ধ্বণি তাঁহার কানে ভাসিয়া আসে। গাছটির দিকে তাকাইয়া তিনি হতচকিত হইয়া গেলেন। তিনি দেখিলেন, গাছের ডালে চাঁদের মত উজ্জল ফুটফুটে একটি শিশু। চাঁদের ন্যায় শিশুটির হাতে-পায়ে স্বর্ণের বলয় ছিল। ইহা দেখিয়া মৃধা সাহেবের বুঝিতে দেরি হইল না যে, এই স্বর্ণকান্ত শিশুটি বন্যাকবলিত কোন হতভাগ্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কারণ প্রাচীনকালে জমিদার ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানদের হাতে-পায়ে সোনার বলয় পরাইবার রেওয়াজ ছিল।
শিশুটিকে দেখিয়া মৃধা সাহেবের অন্তরে পুত্রস্নেহের উদ্রেক হয়। তিনি শিশুটিকে গাছ হইতে নামাইয়া নিজ বাড়িতে লইয়া আসেন। শিশুটির বংশ এবং পিতা-মাতা সম্পর্কে প্রশ্নবান মৃধা সাহেবের অন্তরকে সদা বিদ্ধ করিলেও কখনো তিনি উহার উত্তর পান নাই। তাঁহার নাম শরীফ দীদার আলম এইটুকুই শুধু বলিতে পারিয়াছিল। শিশুটির প্রতি তাঁহার আদর-যত্ন এবং পরবর্তীতে আপন সন্তানের মর্যদায় সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব প্রদান করায় মনে হয় যে, উক্ত প্রশ্ন সমূহের উত্তর না পাওয়াই তাঁহার কাছে মনঃপুত ছিল।
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার বংশ পরিচয় সম্পর্কে তাঁহার পৌত্র হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন তাহার ফরমায়েশকৃত ‘নূরেহক্ব গঞ্জেনূর’ গ্রন্থে হযরত সুরেশ্বরী বাবার সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখিতে গিয়া তাঁহার সম্পর্কে যে মতামত ব্যক্ত করিয়াছেন তাহা নিম্নে হুবহু তুলিয়া দেওয়া হইলঃ “ভারত বর্ষে ধর্ম প্রচারের জন্য ইসলামের পতাকা নিয়া যাহারা পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জমা ও মদীনা মোনাওয়ারা হইতে এই দেশে আসিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে হযরত আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়্যেদ মোহাম্মাদ দীদার উল্লাহ্ শরীফ অন্যতম। তিনি আওলাদে রাসূল (রাঃ) এবং আহলে সুফফা ও আশেকে রাসূল (সাঃ) ছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের নিমিত্তে আরব দেশ হইতে বর্তমান ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত হইয়া বাংলাদেশে আগমন করেন এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার শরিয়তপুরের নড়িয়া থানাধীন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পার্শ্ববর্তী গ্রাম ইছাপাশায় বসতি স্থাপন করেন।
নবাবদের নিকট হইতে তিনি ৩৫০ বিঘা লা’খেরাজ (নিস্কর) ভূমি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি উহা ভূমিহীন গরীবদের দান করিয়া দিয়া নিঃস্ব হইয়া যান এবং পার্শ্ববতী গ্রাম বর্তমান সুরেশ্বরে স্থানান্তরিত হন। বাংলার আলো-বাতাস পরিবেশ ও জনগণের মহব্বতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। ”
বিস্তারিত পড়ুন>১৩২৬ সনের কার্তিক মাসের শেষের দিকে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার বিশেষ ভক্ত ও মুরিদদের পত্র মরফত খবর পাঠাইলেন যে তিনি অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখে ছফরে যাইবেন সুতরাং সকলকে দরবারে উপস্থিত হইবার জন্য নির্দেশ দান করিলেন। বিশেষ করিয়া নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষিপুর) রায়পুর নিবাসী ডাঃ আব্দুল হামিদ সাহেবকে স্বহস্তে চিঠি লিখিয়া পাঠাইলেন যে ২রা অগ্রহায়ণ তিনি ছফরে যাইবেন সুতরাং পত্রপাঠ তিনি যেন দরবারে চলিয়া আসেন। ডাঃ আব্দুল হামিদ মুর্শিদের স্বহস্তে লিখিত পত্র পাইয়াই যথাশ্রীঘ্র দরবারে আসিয়া হাজির হইলেন। ইহার আগে পরেও ডাক্তার সাহেব এমনটি ধরনের চিঠি পাইয়াছেন। বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা যখনই কোথাও কোন সফরে যাইতেন, ডাঃ সাহেব প্রায়শঃই তাঁহার সফর সঙ্গী হইতেন বিধায় এইবারেও মুর্শিদের চিঠি পাইয়া সফরের প্রস্তুতি মূলক নিত্য প্রয়োজনীয় যাহা কিছু দরকার তাহা তিনি সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিয়াছিলেন। দরবারে আসিয়া তিনি দেখিলেন যে সুরেশ্বরী বাবা অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছে। অসুস্থ অবস্থা দেখিয়া তিনি মুর্শিদের নিকট জানিতে চাহিলেন যে এই অসুস্থ শরীর নিয়া সফরে যাওয়া হইবে কেমন করিয়া। উত্তরে সুরেশ্বরী বাবা বলিলেন যে দয়াল চাহেতো কোনই অসুবিধা হইবেনা। দুই একদিন যাইতে শরীর আরও খারাপ হইয়া পড়িল। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎগতিতে মুরিদগণ জানিয়া ফেলিলেন যে সুরেশ্বরী বাবা অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছেন। দলে দলে আশেক, ভক্ত ও মুরিদগণ দরবারে আসিয়া উপস্থিত হইল। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার শ্বাষ-কষ্ট ছিল। এই সময়ে ইহা আরও বাড়িয়া গেল। অসুস্থ হইবার পর প্রথম দিকে তিনি দরবারে আসিয়া বসিতেন কিন্তু কার্তিক মাসের দুই একদিন থাকিতে তিনি শরীর যারপর নাই অসুস্থ হইয়া পড়িবার দরুন ভিতর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। একমাত্র ডাঃ আব্দুল হামিদ সাহেব অন্দর মহলে গমন করিয়া মুর্শিদ ক্বিবলার শারীরিক অবস্থার কথা সবাইকে অবহিত করিতেন। ইতিমধ্যে দয়াল পাকের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি দেখা দিল। উৎসুক আশেক ভক্তের দল বাহির বাড়ির দরজায় আসিয়া ভীড় জমাইতে লাগিল। সবাই বিনিদ্র থাকিয়া ডাঃ আব্দুল হামিদের খবরের অপেক্ষায় বসিয়া াকিত। অবশেষে আসিল সেই মহা বিচ্ছেদের দিন, যেইদিন ভোর হইতেই সুরেশ্বর দরবার শরীফের সমস্ত প্রকৃতিই থমথমে হইয়া উঠিল। কাতারে কাতারে হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় দরবার প্রাঙ্গন মহা শোকের মিছিলে পরিণত হইল। সমস্ত আশেক ও ভক্তদের অন্তরের উদ্বিগ্নতা ও শংকা তাহাদের মুখমন্ডলে স্পষ্ট ফুটিয়া উঠিল। চারিদিকে একটা চাপা দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা সমগ্র দরবারে বিরাজ করিতে লাগিল। ২রা অগ্রহায়ণ সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচ টায় সুরেশ্বরী বাবার প্রাণ প্রিয় খলিফা ডাঃ আব্দুল হামিদ সাহেব যাহার অন্দরে যাইবার একমাত্র অনুমতি ছিল তিনি আলু-থালু মস্তিস্কে কাঁদিতে কাঁদিতে আসিয়া বাহির বাড়ির সিংহ দরজার কাছে দাড়াইলেন। তাহাকে বিস্তারিত পড়ুন>
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তিনবার দ্বার পরিগ্রহ করিয়াছেন। প্রথমা স্ত্রীর গর্ভে দুই পুত্র এবং চার কন্যা, দ্বিতীয় স্ত্রীর নিঃসন্তান ছিলেন এবং তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভে একমাত্র কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করিয়াছেন।
হযরত সুরেশ্বরী বাবার প্রথমা স্ত্রীর গর্ভের সন্তানগণ
হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ (রহঃ)
কুতুবুর রব্বানী হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আব্দুল হাই ওরফে নূরী শাহ্ বাবা ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলার জৈষ্ঠপুত্র। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হইতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু, আরবী এবং ফার্সী ভাষার উপর তাহার অগাধ ব্যুৎপত্তি ছিল। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার বেছাল হক্ব গ্রহণ করিবার এক বছর আগে মোতাবেক বাংলা ১৩২৫ সনের ২০শে মাঘ পবিত্র উরসের দিনে তিনি তাহার জৈষ্ঠ পুত্র হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবাকে তাহার স্থলাভিষিক্ত করিয়া যান। তিনি তাঁহার ভক্ত মুরিদদের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেন, আজ হইতে নূরী শাহ্কে আমার জাহের ও বাতেনের সমস্ত দায়িত্ব দান করতঃ তাহার ভিতরে নূরের বাতি প্রজ্জলিত করিয়া গেলাম।
অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবা জাহের বাতেনে পূর্ণ যোগ্যতার সহিত পিতার ত্বরিকার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটান এবং দরবারে সুলতানুল আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের তত্বাবধান ও দারবারিক যাবতীয় দায়িত্ব সমূহ অত্যন্ত যোগ্যতার সহিত পালন করিয়াছেন। তিনি হাজার হাজার ভক্ত ও মুরিদদের শোক সাাগরে ভাসাইয়া ১৩৬১ সনের ৫ই ভাদ্র ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন।
হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ কলিম শাহ্ (রহঃ)
হযরত কলিম শাহ্ ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র এবং জন্ম সূত্রে অলি। শৈশবেই তিনি কোন কিছুর উপর দৃষ্টিপাত করিয়া যাহা বলিতেন তাহাই হইয়া যাইত। তাহার শৈশব কালীন কিংবদন্তী এখনও লোকের মুখে আলাপ চারিতায় বিশেষ ভাবে স্থান পায়। হযরত কলিম শাহ্ সাহেবের যে ঘটনাটি সমস্ত আশেকানে সুরেশ্বরীর অন্তরে চির জাগরুক হইয়া আছে নিম্নে তাহা উল্লেখ করা হইলঃ বিস্তারিত পড়ুন>
হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) ক্বিবলা কা’বার সাহচর্যে আসিয়া যাহার বায়াত গ্রহণ করিয়াছেন প্রত্যেকেই সর্ব রকমের সন্দেহ ছাড়া মহা সৌভাগ্যবান। আর মুর্শিদের সহ্বত তথা খেদমতে থাকিয়া যাহারা এস্কে ফানা হইয়া তথা ফানাফিশ্ শায়খ এ পৌছাইয়া খেলাফত করিয়াছেন তাহারা প্রত্যেকেই আধ্যাত্ম তথা বেলায়েত গগনের এরককটি পূর্ণ শশী। সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকাকে তাঁহারা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের আনাচে কানাচে করিয়াছেন পরিচিত এবং লক্ষ লক্ষ মুর্দা দীল মানুষের অন্ধকারময় ক্বলবকে করিয়াছেন আলোকোজ্বল। দুই তিন পুরুষ বিগত হওয়ার কারনে অনেকের সম্পর্কেই অথবা তাহার আওলাদ এর সম্পর্কে জানা হইয়া উঠে নাই তবু যতটুকু সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি তাহা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থাকিয়া তুলিয়া ধরিবার চেষ্টা করিলাম মাত্র।
চাটখিল পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী মেন্দি মিয়া (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অন্যতম প্রধান খলিফাদের একজন। বলা হইয়া থাকে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার চার আছহাব এর একজন তিনি ছিলেন। আজীবন তিনি মুর্শিদ ক্বিবলার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি মুশিদের নির্দেশে নিজের দেশে গিয়া ত্বরিকত প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এইখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, জীবদ্দশায় তিনি প্রায়ই তাহার মুর্শিদ ক্বিবলা বাবা সুরেশ্বরীর নিকট আবেদন জানাইতেন, “বাবা জীবদ্দশায় আমি যেমন আমার কোন শান-শওকত চাইনা তেমনি মৃত্যুর পরেও আমার শান-মান প্রচার হোক তা চাইনা। আমি আপনার মাঝে ডুব দিয়া কাল কিয়ামত পর্যন্ত এইভাবে ডুবিয়াই থাকিতে চাই”। হয়তো মুর্শিদ ক্বিবলা তাহার প্রাণের দাবি কবুল করিয়াছিলেন। তাইতো আজ নোয়াখালী জেলার চাটখিলেন এক অজপাড়াগায়ে নির্ঝঞ্জাট ঘুমিয়ে আছেন বাংলার গৌরব রবি, বেলায়েতের মধ্যসূর্য় বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রাঃ) এর অন্যতম রূহানীয়াত সন্তান শাহ্ সূফী সাইয়েদ মেন্দি মিয়া (রাঃ) মাহাকালের মহাচক্রে একদিন হয়তো সবাই ভুলিয়া যাইবে যে, এইখানে ঘুমিয়ে আছে সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এক মহার অলি। বাংলা ১৩৪৫ সনের ১০ই জৈষ্ঠ্য এই মহান অলি বেছাল হক্ব লাভ করেন।
পশ্চিম লক্ষিপুর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী আসলাম ভূঁইয়া (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার কথিত চার আছহাবের অন্যতম প্রধান খলিফা। তাঁহার পিতার নাম হযরত এবাদুল্লাহ্ ভূঁইয়া। তিনি লক্ষিপুর জেলার পশ্চিম লক্ষিপুরের জমিদার ছিলেন। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহনের পর হইতে তিনি জমিদারির সমস্ত কিছু বিষর্জন দিয়া মুর্শিদের চরণ তলে আশ্যয় গ্রহণ করেন। বিস্তারিত পড়ুন>
বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীকে কোতবল এরশাদ মর্তবা দান এবং শাহ্ আহম্মদ আলী খেতাবে ভূষিত করিয়া খেলাফত দান করতঃ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী বাবা (রহঃ) হয়রত সুরেশ্বরী বাবাকে দেশে যাইয়া ধর্ম তথা ত্বরিকত প্রচার করিবার নির্দেশ করিলেন। হযরত সুরেশ্বরী বাবা নিজ মুর্শিদের জ্যোতির্ময় নূরানী চরণ যুগল চুম্বন পূর্বক মুর্শিদের হুকুম শিরধার্য করিয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়া ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করিলেন। দেশে আসিয়া তিনি দেখিলেন যে ধর্মের মধ্যে কোন প্রাণ নাই। মনপ্রাণহীন, প্রেমহীন ধর্ম কতগুলি আচার অনুষ্ঠান ও মন্ত্রের জপনায় পরিণত হইয়াছে। সরল সহজ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলি কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করাকেই ধর্ম পালন বলিয়া বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করিতেছে। সত্য জ্ঞান ও সত্য দর্শন হইতে বঞ্চিত ধর্মের মূল দর্শনের অভাবে তাহারা জ্যোতির্ময় ইসলামকে খুঁজিয়া পাইতেছেনা। তথাকথিত দুনিয়াদার, বাহ্যদর্শী ওহাবী আলেম ওলামাগণ অধর্ম তথা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করাইয়া দিয়াছে। কোরানিক হুকুম আহ্কামের মনগড়া ব্যাখ্যা এবং ভিত্তিহীন ফতোয়াবাজি করিয়া গোটা মানবজাতিকে শুধু বিভক্ত ও পশ্চাদপদই করায়নি বরং মিথ্যাচারের শিকার ও দিকভ্রান্ত করিয়া অশান্তির কবলে নিপতিত করিয়াছে। আল কোরআন মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। সকল মানুষ একজাতিভূক্ত, সকল মানুষ অভিন্ন উপাদান এবং অসীম আল্লাহ্র প্রকৃতির সমন্বয়ে সৃষ্ট বিধায় তাহাদের ধর্ম ও এক এবং অভিন্ন। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য এই ধর্মের মূল উপাদান এবং শান্তি ও মুক্তি ইহার চূড়ান্ত লক্ষ্য। ‘ফানা হইয়া বাকা’ অর্থাৎ যাহা হইতে আগমন সেই আল্লাহ্তেই পূনরায় আত্মলীন হওয়াই মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতা, আর এই সফলতাই ধর্মের মূল উদ্দেশ্য। অথচ মূল লক্ষ্য বর্জিত আনুষ্ঠানিকতার আবর্তে আবদ্ধ হইয়া আছে তথাকথিত অন্ধ ধার্মিকগণ। সাধারন জনগণ নানা মুনির নানা মতের ও পথের গোলক ধাঁধাঁয় দিশাহার হইয়া ভ্রান্তপথকে শুদ্ধ মনে করিয়া পংকিলতার আস্তাকুঁড়ে আত্মাবিসর্জন দিতেছে। এক শ্রেণীর বে-আমল দুনিয়াদার, বাহ্যদর্শী ওহাবী আলেম ধর্ম-কর্মহীন জনসাধারনের ইমাম হইয়া গিয়াছে এবং তাহার অমূলক কথার ঘোর প্যাঁচে পড়িয়া হৃদয় সংক্রান্ত বিষয় হইতে সম্পূর্ণ বঞ্চিত রহিয়াছে। বাহ্যিক অনুষ্ঠান প্রিয় সাধারন মানুষকে নিজেদের ভক্তে পরিণত করিয়াছে। আর এভাবেই সুযোগ বুঝিয়া এহেন ইমামগণ বাংলার গরীব সাধারন ধর্ম জ্ঞানহীন মানুষের উপরে তাহাদের বাহু বিস্তার করিয়াছে। অতঃপর ধর্ম সম্পর্কে অন্ধ, মুক ও বধির সকলেই সেই বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া পড়ে। ফলে অন্ধ আরো অন্ধ হইয়া গিয়াছে, বধির হইয়াছে আরো বধির এবং মুক হারাইয়াছে তাহার অবশিষ্ট বাকশক্তি। বর্তমানে তাহার প্রাণহীন এমন পাক্কা ইবাদতকারী, সূফী, মুত্তাকী এবং অপ্রতিদ্বন্ধি আলেম হইয়া গিয়াছে যে, প্রশংসা ও তাক্লীদ বা আনুগত্যের চিন্তা ছাড়া অন্য কিছুই ভাবিতে পারে না। বিস্তারিত পড়ুন>
কালামে সুরেশ্বরী
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ছিলেন অত্যন্ত বুৎপত্তিময় কবি ও লেখক। তাঁহার রচিত বাংলা ও উর্দু কিতাবগুলি মারেফত রাজ্যের এক বিশাল ভান্ডার। গ্রন্থসমূহ রচনায় জলের মত তিনি ব্যবহার করিয়াছেন আরবী-ফার্সী-উর্দু এবং বাংলা ভাষাকে। বাংলায় রচিত কিতাবসমূহে যেমন মরমী মুর্শীদী কাব্যের সহজ ও সরলতম বুলি অর্নগল বলিয়া গিয়াছেন তেমনি উর্দু ভাষায়ও সুকঠিন বিষয়াদিকে বয়ান করিয়াছেন সাবলীল গতিতে। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার গদ্য ও পদ্য সাহিত্যেও ফুল বাগীচায় পদচারণা করিলেই মনে হয় রুমী-তাবরীজি-সিরাজীর গজল সামায় জলসা বসিয়াছে। এই গ্রন্থগুলো পাঠকালে পাঠককে এলমে মারেফতের তত্বময়তার কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। মারেফতের নিগুড় রহস্যময় এই ধরনের কিতাব বাংলা ভাষায় নিতান্তই দুর্লভ। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা উর্দু এবং ফার্সী ভাষার উপর অতিশয় পান্ডিত্য অর্জন করিয়াছিলেন। উর্দু ভাষায় রচিত তাহার কিতাবগুলি হাকিকত ও তাছাউফের এক অমূল্য রত্নখনি। যে কোন লেখকের পক্ষেই এই ধরনের তথ্যময় কিতাব লিখা শুধু দুঃসাধ্যই নয় রীতিমত অসম্ভব। এশ্কে ইলাহীতে ফানা হইয়া মারেফতের সকল স্তর পার হইয়াই শুধু এই গ্রন্থগুলিই লিখা সম্ভব কেননা তাঁহার রচিত সমস্ত কিতাব সমূহই ইলহামের মাধ্যমে নির্দেশিত ছিল। কিতাব রচনাকালেও তাঁহার অসংখ্য কারামত মানুষ প্রত্যক্ষ করিয়াছে। একবার তিনি রাত্রিকালে মোমবাতি জ্বালাইয়া হুজরা খানায় বসিয়া কিতাব লিখিতেছিলেন। হঠাৎ করিয়াই খাদেম সাহেবের মনে পড়িল যে মুর্শিদ ক্বিবলার আলো জন্য কোন অসুবিধা হইতেছে কিনা খোজ নেওয়া দরকার। তিনি হুজরা খানার ভিতরে উকি দিয়া দেখিলেন যে হযরতের বাম হাতের তর্জনী দিয়া আলো বিচ্চুরিত হইতেছে এবং সেই আলোতেই বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রাঃ) কিতাব রচনা করিতেছেন। কখনো কখনো অন্ধকার ঘরে বসিয়াও তিনি কিতাব রচনা করিতেন। তাঁহার কলম ও কাগজের খস্ খস্ শব্দ শুনিয়া ভক্ত ও খাদেমগণ কিতাব রচনার বিষয়ে অনুমান করিতে পারিতেন।
কুদরতি পাথর মোবারক
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার পবিত্র রওজা মোবারক সম্মুখে সংলগ্ন পূর্বপার্শ্বে চারিপাশ খোলা ছোট্ট ঘরের মধ্যে যে দুইটি বৃহদাকৃতির পাথর দেখিতে পাওয়া যায় ইহাই জীবন্ত পাথর মোবারক। বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী হযরত শাহ আরেফীন শাহ্ (রাঃ) এর রওজা মোবারকে জিয়ারত করিতে গেলে সেইখান হইতে তিনি তাঁহার পাঞ্জাবীর পকেটে করিয়া এই পাথর দুইটি আনিয়াছিলেন। কালক্রমে শরীর বৃদ্ধি পাইয়া পাথর মোবারকদ্বয় বর্তমানে বৃহদাকার ধারণ করিয়াছে।হযরত জালাল নূরী (রাঃ) আফিআনহু এর মুরীদ স্বণামধন্য কবি ও গীতিকার জনাব সিরাজুল ইসলাম প্রথম যেইবার দরবার শরীফে আগমন করেন (তখন তিনি মুরিদ হন নাই) সেইবার গভীর রাতে সুরেশ্বরী বাবার রওজা মোবারকে জিয়ারত করিবার মানসে গেলে তিনি বিশেষ এক রকমের জিকিরের আওয়াজ শুনিতেছিলেন। চারিদিকে তিনি অত্যন্ত মনযোগ সহকারে আওয়াজের উৎস খুজিতে লাগিলেন। কিন্তু কোথাও ইহার সন্ধান পাইলেন না। হঠাৎ পাথর মোবারকের দিকে দৃষ্টি যাইতেই তাহার সর্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। তিনি স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে এই জায়গা হইতেই জিকিরের আওয়াজ আসিতেছে। তিনি আরও নিকটবর্তী হইলে বিশেষ জিকিরের ধ্বণি আরও পরিস্কার হইয়া গেল। অতঃপর তিনি ভয় বিহ্বল চিত্তে পাথর মোবারকের গায়ে তাহার হাত দুইটি দ্বারা স্পর্শ করিলেন, সমগ্র স্বত্তা দিয়া তিনি অনুভব করিলেন যে পাথর মোবারক দুইটি জিকিরের তালে তালে থির থির করিয়া কাপিতেছে (সোবহানাল্লাহ্)। ইহা ছাড়াও পাথর মোবারকের অসংখ্য কারামত প্রকাশ পাইয়াছে। দরবার শরীফে আগত আশেক ও ভক্তগণ তাহাদের রোগ-শোক, বালা-মছিবত হইতে পরিত্রান পাইবার নিমিত্তে পাথর মোবারকের গায়ের ধুলি শরীরে মাখিয়া থাকে, ভক্তি ভরিয়া চুম্বন করিয়া থাকে, কাঁচা দুধ দ্বারা গোসল দেয় এবং তৈল মালিস করিয়া থাকে। ইহাতেই আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ করে
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার রওজা শরীফের উত্তর সংলগ্ন যে দালানটি অবস্থিত উহাই দ্বায়রা শরীফ নামে পরিচিত। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) ‘দ্বায়রায়ে আহম্মদীয়া’ নামে এই দ্বায়রা শরীফ স্থাপন করিয়াছেন। হযরত সুরেশ্বরী বাবা তাঁহার প্রথম জীবনে এই ঘরেই জেকেরের মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত করিয়াছিলেন। তখন ঘরটি টিনের ছিল পরবর্তিতে তাহা দালানে রূপান্তরিত হয়। উল্লেখ্য যে, ময়মনসিংহ জেলার একজন পূণ্যবতী ও ভক্ত মহিলা এই দালানটি নির্মাণ করাইয়া দিয়াছেন।
এই দ্বায়রা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কোঠায় পাঁচটি আসন সংরক্ষিত রহিয়াছে। এই পাঁচটির মধ্যে একটি বাদশাহী তখ্তের অনুরূপ বৃহদাকার আসন। এই আসনটি সর্বশেষ নবী হযরত রাসূলে করিম (সাঃ), হযরত মুসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং হযরত দাউদ (আঃ) এর রূহানীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। ইহাছাড়া বাকী চারটি আসন, হযরত বড় পীর গাউছুল আজম, মাহ্বুবে ছোবহানী শেখ আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ), হযরত খাজায়ে খাজেগাঁ গরীব নেওয়ায মঈনুদ্দিন চিশ্তি (রাঃ), হযরত শেখ আহ্মদ ছেরহেন্দী এমামে রাব্বানী মোজাদ্দেদ আল ফেছানী (রাঃ) এবং নক্শেবন্দী বাবা বাহাউদ্দিন (রাঃ) এর সাথে রূহানী সম্পর্কযুক্ত। ইহা ব্যতীতও এই হুজরা শরীফের সহিত হযরত সুলতানে বেলায়েতে-বাংলা অর্থাৎ বেলায়েত সম্রাট শাহ্ জালালউদ্দীন ইয়েমনী ও সিলেটি (রাঃ), হযরত শাহ্ বদিউদ্দীন কোতএব মাদার (রাঃ) ও হযরত শাহ্ বু’আলী কলন্দও পানিপথী (রাঃ) এর রূহানী সম্পর্ক ও বিদ্যমান রহিয়াছে। এই জন্যই স্বয়ং সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) এই হুজরা শরীফে মা ফাতেমা (রাঃ), ঈমাম সাহেবদ্বয় ও হযরত আলী (আঃ) এর নজর নেয়াজ অর্পণ করিতেন এবং অন্যান্য বিপন্ন ব্যক্তিদেরও অর্পণ করিতে বলিতেন।
পবিত্র দ্বায়রা শরীফ
পবিত্র আশা মোবারক
কলিম শাহ তোরণ
পবিত্র আসন মোবারক
ফেসবুক পেজ
বাৎসরিক উরস শরীফ
বাবা জালাল নূরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর প্রতিষ্ঠিত
দরবেশী সম্মেলন
১৮, ১৯ ও ২০ জৈষ্ঠ্য
বাবা শাহ্ নূরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর
পবিত্র ওফাৎ দিবস
উপলক্ষে উরসঃ ৪ঠা ও ৫ই ভাদ্র
বাবা জালাল নূরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর
পবিত্র জন্মদিন
উপলক্ষে উরসঃ ৭ ও ৮ই কার্তিক
বাবা সুরেশ্বরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর
মহা পবিত্র জন্ম ও ওফাৎ দিবস
উপলক্ষে উরসঃ ১ লা, ২রা ও ৩রা অগ্রহায়ণ
বাবা জালাল নূরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর
পবিত্র ওফাৎ দিবস
উপলক্ষে উরসঃ ২৪ ও ২৫ ও শে ফাল্গুন
পবিত্র নিশান মোবারক
উত্তোলন
৫ই মাঘ
বাবা সুরেশ্বরী ক্বেবলা কা’বা (রঃ) এর প্রতিষ্ঠিত
বাৎসরিক উরস শরীফ
উপলক্ষে উরসঃ ১৮, ১৯ ও ২০ শে মাঘ