সাবেক বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা বর্তমান শরিয়তপুর জেলাধীন নড়িয়া থানার অন্তর্গত অন্যতম গ্রামের নাম সুরেশ্বর। গ্রামটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ বারো ভূঁইয়ার অন্যতম রাজা কেদার রায়ের রাজধানী শ্রীপুর সংলগ্ন দক্ষিণে অবস্থিত। এই গ্রামের উত্তরে খরস্রোতা কীর্তিনাশা পদ্ম নদী। পদ্ম নদীর উত্তর পাড়ে ঢাকা জেলা। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, রাজা কেদার রায় ছিলেন অত্যন্ত রূচিশীল, পরিচ্ছন্ন এবং সৌন্দর্যের পূজারী। তাহার রাজত্ব জুড়িয়া বিশেষ করিয়া রাজধানীর অনেক জায়গায় নয়নাভিরাম যে সব কীর্তি তথা স্থাপনাসমূহ নির্মান করিয়াছিলেন তাহা পর্যটকদের বিশেষ ভাবে আকৃষ্টি করিত।

পদ্মা নদীর নিষ্ঠুর আঘাতে সেই সমস্ত কীর্তি ভাঙ্গনের করাল থাবায় নদী গর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে। এইজন্য পদ্মা নদীকে কীর্তিনাশা বলা হয়। সুরেশ্বরের পূবূদিকে মেঘনা নদী এবং নদীর অপর তীরে বৃহত্তর কুমিল্লার চাঁদপুর জেলা অবস্থিত। 

পদ্মার ভাঙ্গনের শিকার সবুজ শ্যামল ছায়াঘন আনন্দের কুঞ্জনিকেতন মরমীসুরে আর নূরে  মুখরিখ ও জ্যোতির্ময় এই সুরেশ্বর গ্রামটি বর্তমানে সাবেক ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান এবং বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম আধ্যাত্মিক তীর্থ কেন্দ্র। সুরেশ্বর নামটি শোনা আল্লাহ্, রাসূল এবং আউলিয়াগণের আশেক ও ভক্ত প্রেমিকদের অন্তর শ্রদ্ধাভক্তিরসে উথলিয়া উঠে এবং প্রেমাবেগে বিগলিত হইয়া যায়। তখন নিজের অজান্তেই ভক্তগণ গাহিয়া ওঠেন “মন চলেছে সুরেশ্বর, কিসের সাধের বাড়ি ঘর” কারণ, এই গ্রামেই বিশ্বের অত্যতম শ্রেষ্ঠ স্মরণীয় বরণীয় অলিয়ে মুকাম্মেল, গাউসে জামাস, হিজরী চৌদ্দ শতকের মোজাদ্দেদ, অবিভক্ত বাংলার শরিয়ত ও ত্বরিকতের শ্রেষ্ঠতম আলেম, মুর্শিদে আজম, মা’শুকে ইলাহী, শাসছুল ওলামা হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহ্ম্মদ আলী ওরফে হযরত বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেন।

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রহঃ) কঠোর কৃচ্ছ সাধনা ও নিরলস ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতার চূড়ান্ত আসন এবং বেলায়েতের সর্বোচ্চ মোকামে অধিষ্ঠান লাভ করেন। এ জন্য তিনি “আশেকে ইলাহী” হইতে “মা’শুকে ইলাহী’র মর্যাদা প্রাপ্ত হন। এই গ্রন্থের “সাধনা জীবন” পরিচ্ছদে, সাধনায় তাঁহার কৃচ্ছতা ও তিতিক্ষা সম্পর্কে আলোকপাত করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে।

অতি প্রাচীনকাল হইতেই বিশ্ববিখ্যাত মনিষী ও আউলিয়া কেরামগণকে তাঁহাদের গ্রামের, জন্মস্থানের অথবা সাধনাস্থানের নামানুসারে সম্বোধন করিবার রেওয়াজ প্রচলিত আছে এবং সেই নামেই তাঁহারা অধিক পরিচিত এবং খ্যাত। উদাহরণস্বরূপ, জিলানী, রূমী, জামী, গায্যালী, শিরাজী, আজমিরী, চিশ্তি এবং হারুনী প্রমুখ। তদ্রুপ হিজরী চৌদ্দ শতকের মোজাদ্দেদ, মা’শুকে ইলাহী, বৃহত্তর বাংলার শরিয়ত ও ত্বরিকতের শ্রেষ্ঠতম আলেম, শামছুল ওলামা শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ আহম্মদ আলী ওরফে বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীও (রহঃ) তাঁহার ভক্তবৃন্দ ও সকলের নিকট সুরেশ্বরের নামানুসারে “হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা” নামেই সুপরিচিত এবং খ্যাত। ইহাছাড়াও যেহেতু তাঁহার নাম “জানশরীফ”, ভক্তগণ অতি আদরে “জানু বাবা” এবং অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন বলিয়া “দয়াল বাবা” বলেও অনেকে ডাকেন।

আধ্যাত্নিক জগতের কুতুবুল এরশাদ সুউচচ মহানতম আসনে সমাসীন, বেলায়েত গগণের সূর্য মাহবুবে ছোবহানী, সুলতানুল আউলিয়া হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রঃ) কোলকাতার মেহেদীবাগে হযরত গাউছে আজম খাজায়ে খাজেগাঁ আজমেরী (রঃ), হযরত জালাল উদ্দিন রুমী (রঃ), হযরত ফরিদ উদ্দিন আত্তার (রঃ), হযরত বু-আলী শহ্ কলন্দর (রঃ) ও হযরত শামছে তাবরেজের রূহানীয়ত অনির্বান প্রদীপ ও তাছাউফের মহামূল্য রত্নরাজী আহরনকারী ডুবুরী হযরত খিজির (আঃ) এর ছিনার ইলমে লাদুনী লাভকারী শাহ্ সূফী  সাইয়দে আহম্মদে আলী ওরফে হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়দে জানশরীফ শাহ্ সূরশ্বেরী কুদ্দুসা ছরেরুহুল আজিজ কিবলা কা’বা (রঃ) এ আগমনে জগত প্রসিদ্ধ হয়েছে, ধরাকে ধন্য ও সুরেশ্বরকে তর্থভূমিতে এবং সুরেশ্বরের মাটিকে খোদা প্রেমিকগণের চোখের সুরমায় পরিনত করেছে।

গুগল ম্যাপে মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফ

ভিডিও চিত্রে মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফের পরিচিতি

রওজা শরীফঃ হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আহম্মদে আলী ওরফে বাব জানশরীফ শাহ্ সূরশ্বেরী (রহঃ) নড়িয়া, শরীয়তপুর ।

রওজা শরীফঃ হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আবদুল হাই ওরফে বাবা নূর শাহ্ (রহঃ) নড়িয়া , শরীয়তপুর ।

রওজা শরীফঃ হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রহঃ) নড়িয়া , শরীয়তপুর ।

হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রহঃ) এর মুরিদ ও পুত্র হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম নূরী আল্ সুরেশ্বরী, মোন্তাজিমে গদীনশীন, মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফ, সভাপতিঃ আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ।

দায়রা শরীফ

হযরত সুরেশ্বরী কিবলা (রঃ) ”দ্বায়রায়ে আহমদিয়া” নামে একটি দ্বায়রা শরীফ স্থাপন করেন। এ দ্বায়রা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কোঠায় পাঁচটি আসন সংরক্ষিত আছে। এ পাঁচটি আসনের মধ্যে একটি বাদশাহী তখতের যা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত রাসুলে করিম (সঃ), হযরত মুসা (আঃ), হযরত ঈশা (আঃ), হযরত দাউদ (আঃ) এর রূহানীর সথে সম্পর্ক যুক্ত। বাকী চারটি আসন হযরত বড় পীর গাউছে আযম মাহবুবে সোবহানী শায়েখ আব্দুল কাদের জেলানী (রঃ), খাজায়ে খাজেগাঁ গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ), হযরত শেখ আহম্মদ সেরহিন্দী মোজাদ্দেদী আল-ফেসানী (রঃ) রূহানীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এ ছাড়াও হুজুরা শরীফের সাথে সুলতানে বেলায়েত বাবা শাহ্ জালাল ইয়ামেনী (রঃ) ও হযরত শাহ্ বদীউদ্দিন মাদার (রঃ) ও হযরত বু-আলী শাহ্ কলন্দর পানিপথি (রঃ) এর রূহানীর সাথে সম্পর্ক বিদ্যমান। পাক পঞ্জাতন পাকের সাথেও হুজুরা শরীফের একটি বিশেষ রহানী সম্পর্ক বিদ্যমান।

Loading