কবিতা বা কাব্য সুন্দর মননের শ্রেষ্ঠতম ফসল ও একটি উন্নত শিল্প। সত্যাশ্রয়ী কাব্য জগতের সুন্দরতম বিষয়ের মধ্যে অন্যতম। সত্য ও সুন্দরের সাধক, কল্যাণের বার্তা বাহক নবী করিম (সাঃ) ব্যক্তিগতভাবে কাব্য প্রেমিক ছিলেন। তিনি সত্যাশ্রয়ী সুন্দর কবিতার ভক্ত ছিলেন। এ ধরনের কবিতা চর্চাকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। তিনি কবিতা রচনা করেন নি। এর পেছনে যে কারণটি ছিল তা সম্ভবত এই যে, তিনি যে ঐশী কিতাব অর্থাৎ পবিত্র কোরআন লাভ করেছিলেন তা এক ধরণের শ্রেষ্ঠ কাব্যরসে আচ্ছাদিত। তাই তিনি যদি কাব্য রচনা করতে পারতেন, তাহলে মানুষ তাঁহার এই ঐশী কিতাবের বিষয়ে হয়তো সন্দেহ প্রকাশ করতো। আল্লাহ তাই বলেছেন, “আমি মোহাম্মদ (সাঃ) কে বাক্য রচনা শেখায়নি। তা তাঁহার জন্য শোভনীয়ও ছিল না”।
কবিদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য মহানবী সকলকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আর্থিকভাবে কবিদের সহায়তা করা পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার সমতুল্য।”
তিনি নিজে অনেক সময় কবিদের বেশী বেশী করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছেন। যেমন গনিমতের মালের ভাগ-বাটোয়ারা করার ক্ষেত্রে তিনি অনেক সময় কবিদেরকে বেশী দিতেন। কথিত আছে যে, একবার নবী করিম (সাঃ) গণিমতের মাল ভাগ করছিলেন আব্বাস বিন মিরদাস নামক কবিকে তিনি চারটি উট দিয়েছিলেন। এত তার মন না ভারায় তিনি কবিতার সুরে রাসূলের কাছে তার অভিলাষ ব্যক্ত করলেন। রাসূল (সাঃ) তার কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে, এই কবিকে খুশি করতে পারো। মোহাম্মদ (সাঃ) এর এই আহবান শুনে হযরত আবু বকর (রহঃ) তাকে নিয়ে গেলেন এবং তাঁহার থেকে ঐ কবিকে বেছে বেছে একশত উট নিয়ে যেতে বললেন।” এত কেবল দুনিয়ার পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। কবি হাসান বিন সাবেতের উদ্দেশ্যে রাসূলে করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, “হে হাসান, আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য পুরষ্কার রয়েছে জান্নাত।
রাসূলে করিম (সাঃ) সফরের সময় মাঝে মধ্যে কবিদের সাথে নিয়ে বের হতেন। পথমধ্যে তিনি তাদের কাছ থেকে কবিতা শুনতেন। যুদ্ধের সময়ও তার দলে অনেক সময় কবিদের দেখা যেত। এর মাধ্যমে বুঝা যায় কবিতাকে তিনি অত্যন্ত উপকারী এবং উপাদেয় বিষয় বলেও মনে করতেন। রাসূল (সাঃ) অনেক বক্তৃতা দেওয়ার সময়ও কবিতা উদ্ধৃতি দিতেন।
রাসূল (সাঃ) এর কাব্য প্রীতি তাঁহার সাহাবীদের, এমনকি তাঁহার পরিবারে অনেককে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছিল। নবী করিম (সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতেমা তুজজোহরা (রহঃ) ও কবিতা লিখতেন। মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পরে তিনি সুদীর্ঘ এবং অত্যন্ত করুণ একটি মার্সিয়া রচনা করেছিলেন। হযরত আবু বকর (রহঃ) হযরত ওমর ফারুক (রহঃ), হযরত আলী (রহঃ) কাব্যচর্চা করতেন।
নবী করিম (সাঃ) যে কবিতা পছন্দ করতেন তা হল সত্য, সুন্দর ও কল্যানের বাহক। সর্বোত্তম কাব্য হিসেবে তিনি আল্লাহর প্রতি নিবেদিত কবিতাকে নির্দেশ করেন। তিনি এই ধরনের কবিতাকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন।
আল্লাহ্কে পেতে হলে মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ভালবাসতে হবে এটাই প্রধান শর্ত। রাসূল খুশি হলে আল্লাহ্ খুশি। রাসূুল অখুশি হলে আল্লাহ্ অখুশি। তাই রাসূলের প্রতি ভালবাসা ও মহব্বত রাখা ঈমানের অঙ্গ। রাসূলের প্রতি ভালবাসা ছাড়া কেউ মুমিন বলেই গন্য হবে না।
প্রেম ভালবাসা-আসক্তি যথেষ্ট আপেক্ষিক বিষয়। কোন কিছুকে দেখা, জানা, বোঝা ও উপলব্ধির উপর নির্ভর করে বিষয়টি। উপলব্ধি যত সুন্দর হবে ভালোবাসাও তত গভীর হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা তাদেরই বেশী, যাঁরা তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করতে পেরেছিলেন, জানতে চিনতে পেরেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁহার সাহাবীগণ ছিলেন অগ্রগণ্য। তাঁকে অতি নিকট থেকে নিরীক্ষণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁদের। তাই সাহাবীরা যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শান, মান ও মর্যাদা। সেজন্য সর্বোতভাবেই তাঁহার রাসূল (সাঃ) এর সাহচর্য লাভের জন্য উদগ্রীব থাকতেন। পরিপূর্ণ ভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসরণের জন্য এবং নিজ জীবনের চেয়ে তাঁকে পাওয়া পরম সুযোগ ও সৌভাগ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অতি ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন হযরত আলী (রহঃ)। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রেমে মুগ্ধ ও আত্মহারা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সাহায্যের অভিপ্রায় তিনি একাধিক বার নিজ জীবনকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। হিজরতের সময় অধিকাংশ মুসলমান মক্কা ছেড়ে মদিনা চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখনও আল্লাহর হুকুমের প্রতীক্ষায় আছেন। এদিকে মক্কার ইসলাম বিরোধী কুরাইশরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিবে। আল্লাহ্পাক জিব্রাঈল (আঃ) মারফত এ খবর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানিয়ে দেন। তিন মদিনায় হিজরতের অনুমতি লাভ করলেন। তাঁহার হিজরতের সংবাদ যদি শত্রুরা জানতে পারে, তবে তাঁরা পিছু নেবে। তাই শত্রু যাতে সন্দেহ না হয় সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিছানায় কারো রাত্রি যাপন করা প্রয়োজন। যাতে সে সময়ের মধ্যে তিনি শত্রুর নাগালের বাইরে চলে যতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিছানায় মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে ঘুমাবার দুঃসাহসিক কাজটি করেছিলেন, হযরত আলী (রহঃ)। রাসূলল্লাহ (সাঃ) যে চাদরটি গায়ে দিয়ে ঘুমাতেন সেই সবুজ রঙ্গের চাদরটি গায়ে জড়িয়ে হযরত আলী (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ঘরের দরজার কাছেই ছিল কুরাইশ যুবকদের ভয়ঙ্কর দল। তারা সশস্ত্র অবস্থায় সুযোগের প্রতীক্ষায় ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এক মুঠি মাটি কুরাইশ যুবকদের উদ্দেশ্য ছুঁড়ে দেন। ফলে আল্লাহ্ তায়ালা অপেক্ষামাণ কুরাইশ দলের দৃষ্টিশক্তি আচ্ছন্ন করে দিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখতে পেল না। তারা যেন দেখছিল যে, তিনি নিজ বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন।
নবীজীর জীবন রক্ষার তাগিদে নিজ জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন হযরত আলী (রহঃ)। তিনি জানতেন যে, নবীজীর বিছানায় ঘুমাবার সময় যে রাসূল (সাঃ) নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পক্ষে এমন দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
খন্দকের যুদ্ধে সালা পর্বতের এক উপত্যকায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য একটি তাঁবু নির্মাণ করা হয়। এক হিম ঠান্ডা রাতে চাদর মুড়ি দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) একাকী শুয়ে ছিলেন। হঠাৎ তাঁবুর মধ্যে অস্ত্রে ঝনঝনানি শুনতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন কে? উত্তর পেলেন সাদ আব ওয়াক্কসর পুত্র। কি জন্য এসেছে? সাদ বললেন, সাদের হাজার জীবন অপেক্ষা আল্লাহর রাসূল হচ্ছেন প্রিয়তম। এ অন্ধকার হিম ঠান্ডা রাতে আপনার ব্যাপারে আমার ভয় হলো। তাই পাহারার জন্য হাজির হয়েছি। রাসূল (সাঃ) এর জীবন ও ভালবাসার তুলনায় কনকনে ঠান্ডা ও নিজ জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন সাহেবী সাদ (রহঃ)।
হিজরী তৃতীয় সনে মক্কার মুশরিকদের সাথে সংঘটিত হয় ওহুদের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ের দ্বারা প্রান্তে পৌঁছেও বাহিনীর ভুলের কারণে মুসলিম বাহিনী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এ সময় মুষ্টিমেয় কয়েকজন সৈনিক রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে ঘিরে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন। হযররত আম্মা বিন্ ইয়াসীর শহীদ হন। কাতাদা বিন নুমানের চোখে শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর লাগলে চক্ষুকোটের থেকে মনিটি বের হয়ে তাঁহার গন্ডের উপর ঝুলতে থাকে। হযরত আবু চক্ষুকোটোর থেকে মনিটি বের হয়ে তাঁহার গন্ডের উপর ঝুলতে থাকে। হযরত আবু দুজানা রাসূলুল্লাহ্ এর দিকে মুখ করে তাঁহার পুরো দেহটি ঢাল বানিয়ে নেন। রাসূলুল্লাহ শরীরে কোন আঘাত যেন না লাগে। এ অবস্থায় সাহাবী আবু দুজানা আহত এবং রক্তপ্লুত হয়েছেন। তখন মুসলমানদের মধ্যে হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রহঃ) অত্যন্ত সাহসিকতা সাথে তীর ছুঁড়ছিলেন। আর হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এক হাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে বর্শা নিয়ে শত্রুদের উপর প্রচন্ড আক্রমন চালান।
যুদ্ধের এক পর্যাায়ে আনসারদের বারোজন এবং মুজাহিদদের মধ্যে হযরত তালহা (রহঃ) ছাড়া আর সকলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাহাড়ের একটি চূড়ায় উঠলেন। এমন এক সময় একদল শত্রু সৈন্য তাঁকে ঘিরে ফেললো। এমন এক সময় একদল শত্রু সৈন্য তাঁকে ঘিরে ফেললো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করলেন, “কে আছো? যে হামলাকারীদের আমার কাছে থেকে হাটিয়ে দিতে পার?” হযরত তালহা এগিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বারণ করেন। তখন আনসারীদের একজন এগিয়ে আসলেন। তিনি কাফেরদের সাথে লড়াই করে শহীদ হলেন। আরও একজন আনসার এগিয়ে আসলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবন রক্ষা করতে। তিনি শহীদ হলেন। এভাবে একে একে সকল আনসার রাসূল (সাঃ) এর প্রাণ রক্ষার্থে অবলীলায় শাহাদাত বরণ করলেন। অবশেষে হযরত তালহা (রহঃ) এগিয়ে আসলেন। তিনি আক্রমণ চালাচ্ছিলেন। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আহত হলেন। তাঁহার পবিত্র দান্দান মোবারক শহীদ হলো তিনি রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় হযরত তালহা (রহঃ) একবার মুশরিদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদেরকে একটু দূরে তাড়িয়ে দেন। আবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দিকে ছুটে এসে তাঁকে কাঁধে করে পাহাড়ের ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। এক স্থানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে রেখে আবার নতুন করে হামলা চালান। এভাবে সেদিন তিনি মুশরিকদের প্রতিহত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি তাঁদের ভালবাসা জয়ী হয়।
হযরত আবু বকর (রহঃ) বলেন, এ সময় আমি ও আবু উবাইদা রাসূল (সাঃ) থেকে দূরে সরে পড়েছিলেন, কিছুক্ষণ পর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে ফিরে যাবার জন্য এগিয়ে গেলে তিনি বলেছেন, আমাকে ছাড় তোমাদের বন্ধু তালহাকে দেখ। আমরা তাকিয়ে দেখি তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গর্তে অজ্ঞান হয়ে আছেন। তাঁহার একটি হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায়। আর সারা দেহে তরবারী ও তীর বর্শার সত্তরটির বেশী আঘাত।
এই ছিল রাসূল প্রেমের চিহ্ন। নিজ শরীর জখমের পর জখম হয়েছে তারা। এটাই শুধু ভালবাসা বললেন ভুল হবে। বরং ভালবাসার চেয়েও অনেক বড় কিছু।
রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সাহাবীদের এ ভালবাসা অন্যকোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের কোন উপায় নেই। শুধু আল্লাহ্কে পাওয়ার আকাঙ্খায় তাঁদেরএ ব্যাকুলতা, জীবনপণ প্রচেষ্টা। পবিত্র কোরআনের বাণীই তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছে এ পথে চলতে। তাঁহারা পবিত্র কোরআনের মর্মার্থ যথার্থভাবে উপলব্ধি করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সান্নিধ্যে এসে এমন কিছু ঐশ্বরিকভাবে অনুভব করেছিলেন যা তাঁদের হৃদয়কে রাসূল প্রেমে ভরিয়ে দিয়েছিল।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি সাহাবীদের এত ভালবাসা নিদর্শন রয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তাঁহারা সবসময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সর্ব্বোচ্চ সম্মান মর্যাদা প্রদর্শনের চেষ্টা করতেন। হযরত জাবীর (রহঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁহার ঘরে প্রবেশ করলেন। লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল ঘর; তখন বসার স্থান না পেয়ে ঘরের বাইরে বসে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁহাকে বাইরে বসতে দেখে নিজের একটি কাপড় ভাঁজ করে জাবীর (রহঃ) এর দিকে ছুড়েঁ দিলেন এবং বললেন কাপড়টির উপর বসো। জাবীর (রহঃ) কাপড়টি তুলে নিজের চোখে লাগলেন এবং চুমু খেলেন। কিন্তু তাতে বসলে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি ভক্তি মহব্বত ও সম্মানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন হযরত জাবীর (রহঃ)। একই রকম শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখিয়েছেন হযরত বেলাল (রহঃ) তাঁহার কাছে কিছু খেজুর ছিল। তিনি তা থেকে কিছু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে উপঢোকন দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেজুরগুলো নিম্নমানের হওয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দিতে তিনি ইতস্তত বোধ করেছিলেন। অবশেষে তিনি দু’শ খেজুরের বিনিময়ে একশ উৎকৃষ্ট খেজুর লাভ করেন। অতপর সেই উৎকৃষ্ট খেজুরই রাসূল (সাঃ) এর খেদমতে পাঠালেন। প্রেমিকের জন্য ভালবাসার নিদর্শন এরকমই হওয়া উচিত।
হযরত আবু হুরায়য়া (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সঙ্গ লাভের জন্য সব সময় উদ্গ্রীব থাকতেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রেমে এতই অধীর ছিলেন যে, সর্বদা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পবিত্র বদন পানে তাকিয়ে থাকতেন। তিনি বলতেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর ও দীপ্তিমান কোন কিছু আমি দেখিনি। তাঁহার চেহারায় যেন সুর্যের কিরণ ঝলমল করতে থাকে।” রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় তিনি বিয়ে করেননি। জ্ঞানর্জনের প্রতি গভীর আগ্রহ এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মজলিশে উপস্থিতির ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্ব প্রদানের কারণে জীবনে তিনি এত বেশী ক্ষুধা ও দারিদ্র সহ্য করছেন যে, তাঁহার মুসলিমদের মধ্যে কেউই তা করে নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রেমের তুলনায় জীবনের অন্যসব কিছুই ছিল তাঁহার কাছে তুচ্ছ।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবীগণ ছিলেন প্রকৃত জ্ঞানী। তাঁহারা কুরানকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি এতটা ভালবাসা ও সম্মান দেখানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। আল্লাহকে পাওয়ার প্রচেষ্টায় আমাদেরকেও প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করতে হবে। শুধুমাত্র জাহেরী বা সাধারণ শিক্ষা দিয়ে কোরআন বুঝা যাবে না। এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর মাহাত্মা জানা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা বাতেনী শিক্ষা।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রেমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন। রাসূলকে পাওয়া মানে সৃষ্টির সকল রহস্যকে বোঝা বা পাওয়া। সময়ে অসময়ে আপদে বিপদে তাঁহারা আল্লাহ রাসূলকে গভীর ভাবে স্মরণ করেছে।