বংশধর বা উত্তরাধিকারীদের উন্নতি ও প্রগতির জন্য পূর্বসূরী মহান সাধকদের মহান কৃতিত্ব ও কর্মসাধনার চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন। অতীতে এইসব সাধকরা মানবজাতির কলাণের জন্য তাঁদের উৎসর্গ করতেন, বিশ্বখ্যাত ফার্সী কবি ও ঊনবিংশ শতাব্দীর মহান সাধক হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ও একইভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। সে সময় কোনো বিধিবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। অধিকাংশ ছাত্র মাদ্রাসা পাঠশালা, টোল ইত্যাদিতে বিদ্যা চর্চা করত। চার বছর থেকে দশ বৎসর পযর্ন্ত তিনি পিতামাতার নিকট নিজেদের পারিবারিক মাদ্রাসাতে শিক্ষালাভ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ তাঁহার মুখস্ত হয়ে যায়। তাঁহার স্মৃতিশক্তি এত প্রবল ছিল যার ফলে তিনি একবার যা পাঠ বা শ্রবণ করতেন তা কখনই বিস্মৃত হতেন না। তাঁহার হস্তাক্ষর অতি সুন্দর ছিল, কন্ঠস্বর ছিল সুললিত। শৈশব থেকে তাঁহার ব্যক্তিত্ব ছিল আকর্ষণীয়। তিনি খুব ধার্মিক ছিলেন এবং ইসলাম ধর্মের সমস্ত নিয়মকানুন মান্য করতেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়লেই তাঁহার দুই নয়ন দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ত। যখন তিনি জল পান করতেন তখনই তাঁহার মনে হত কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি। দুঃখজনক ঘটনার কথা মনে করে কখনও তিন চুমুকের বেশী জল পান করতেন না।

তিনি তাঁদের পারিবারিক মাদ্রাসা হাওড়া জেলার মুনশির হাটের ধসা পানা উল্লাহ্ মাদ্রাসায় পিতার কাছে আধ্যাত্মিক বিষয়ক শিক্ষা লাভ করেন । তাঁহার পিতা হাদিস, ফেকা প্রভৃতি বিষয় ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ শিক্ষা দিতেন। মা সাইয়েদা সাদিয়া খাতুনের পূর্বপুরুষ ছিলেন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা মা ফাতেমা (রহঃ) এর বংশধর, তিনি কোরআনে হাফেজ ও কারী ছিলেন। যিনি বারো মাসের বেশীর ভাগ সময় রোজা রাখতেন এবং তাঁহার স্বামীর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন।

সে যুগে হযরত সাইয়েদ ওয়ারেস আলী বিখ্যাত মহাপুরুষ ছিলেন । হযরত সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর পূর্বপুরুষের আদি নিবাস ছিল আরব দেশের মক্কানগরীতে। তিনি হযরত আলী (রহঃ) ও হযরত গাউসুল আজম বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর (রহঃ) এর বংশধর। তাঁহার প্রথম পুরুষ ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্রভুক্ত। বিখ্যাত দানবীর হাজী মহসীন (মহসেন আলী) এই বংশধর এক সন্তান। হাজী মহ: মহসীনের আদি নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদ জেলা সিজ গ্রামে। হযরত ফতেহ আলী (রহঃ) এর পিতা সাইয়েদ ওয়ারেস আলী আধ্যাত্মিক জগতের মহা উচ্চ মোকামের সাধক ও পীর ছিলেন। তিনি কবি সাহিত্যিক ও কাব্যচর্চার ওস্তাদ ছিলেন। ১৮০১ সালে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ফার্সী বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। হাওড়া প্রাচীন ধসা মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে সাইয়েদ ওয়ারেস আলীর নাম পাওয়া যায়।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *