হযরত কলিম শাহ্ ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র এবং জন্ম সূত্রে অলি। শৈশবেই তিনি কোন কিছুর উপর দৃষ্টিপাত করিয়া যাহা বলিতেন তাহাই হইয়া যাইত। তাহার শৈশব কালীন কিংবদন্তী এখনও লোকের মুখে আলাপ চারিতায় বিশেষ ভাবে স্থান পায়। হযরত কলিম শাহ্ সাহেবের যে ঘটনাটি সমস্ত আশেকানে সুরেশ্বরীর অন্তরে চির জাগরুক হইয়া আছে নিম্নে তাহা উল্লেখ করা হইলঃ

দরবার প্রাঙ্গনে বাবা সুরেশ্বরী নিজ মোবারক হস্তে একটি বেগুনের বাগান করিয়াছিলেন। সকাল বিকাল তিনি নিজ হাতে সেই বাগানের পরিচর্যা করিতেন। প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় বাগানের বেগুন গাছে বেগুন ধরিল। নিত্যকার মত সুরেশ্বরী বাবা বাগানের পরির্চযা করিতে গিয়া দেখিলেন যে গাছের কূষা (কচি) বেগুনগুলি কে যেন ছিড়িয়া ফেলায়াছে। এই অবস্থা দেখিয়া সুরেশ্বরী বাবা ভয়ানক ক্ষেপিয়া গিয়া গালমন্দ করিলেন। বাগান হইতে বাহির হইয়া সুরেশ্বরী বাবা কয়েকজন ভক্তের সহিত আলাপ আলোচনায় মসগুল হইলেন, ইত্যবসরে কলিম শাহ্ বাবা বাবা একটি টুকরিতে করিয়া কুষা বেগুন গুলি সুরেশ্বরী বাবার সামনে আনিয়া রাখিলেন। এহেন কান্ড দেখিয়া কলিম শাহ্ বাবার উপর রাগান্বিত হইলেন। কলিম শাহ্ বাবাও কিছুক্ষণ কি করিবেন বুঝিতে না পারিয়া বলিলেন যে, বাবা আপনি যখন রাগ হইয়াছেন তখন বেগুনগুলি গাছে লাগাইয়া দিয়া আসি। সুরেশ্বরী বাবাও তখন আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন বিধায় কলিম শাহ্ বাবার জ্বালাতন হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্য কথার ফাকেই বলিলেন, আচ্ছা যাও লাগাইয়া দিয়া আস। কলিম শাহ্ বাবা টুকরিটি লইয়া বেগুনের বাগানে যাইয়া টুকরিটি রাখিয়া টুকরি মধ্যস্থিত বেগুন গুলির একেকটি লইয়া যেখান হইতে ছিড়িয়াছিলেন সেই বোটায় ধরিয়া বলিলেন, তোমাদেরকে ছিড়িয়াছি বলিয়া আমার আব্বা ভীষন রাগ হইয়াছেন।, অনতিবিলম্বে তোমরা জোড়া লাগিয়া যাও। আল্লাহর কি মহিমা যে এইটুকু বলিবার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি বেগুন স্ব স্ব বোটায় লাগিয়া গেল। খালি টুকরিটি লইয়া পূণরায় তিনি সুরেশ্বরী বাবার নিকট যাইয়া বলিলেন বাবা, আমি বেগুনগুলি গাছে লাগাইয়া দিয়া আসিয়াছি, এই বলিয়া তাহা দেখিবার জন্য হাত ধরিয়া টানাটানি শুরু করিয়া দিলেন। সুরেশ্বরী বাবাও তাহার হাত হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্য পুত্রের সহিত বাগানে আসিয়া দাড়াইলেন এবং অবাক হইয়া দেখিলেন যে বেগুন গুলি সত্য সত্যিই পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া গিয়াছে। ইহা দেখিয়া হযরত সুরেশ্বরী বাবা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকিয়া কলিম শাহ্ বাবাকে জিজ্ঞাস করিলেন, তুমি কিভাবে জোড়া লাগাইলা? উত্তরে কলিম শাহ্ বাবা বলিলেন যে আপনি ভীষণ রাগ হইয়াছেন বলিয়া উহাদের জোড়া লাগিয়া যাইতে বলিয়াছি, ইহা শুনিয়া বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা বলিয়া বসিলেন, “এক বনেতো দুই বাঘ বাস করেনা”। এই সর্ব্বসত্য ঘটনাটিই আশেকানে সুরেশ্বরীর মুখে মুখে কিংবদন্তির মত হইয়া রহিয়াছে। হযরত কলিম শাহ্ বাবার অসংখ্য কারামত শৈশবেই প্রকাশ পাইয়াছিল।

Loading