সামছুল আরেফিন রফিকুচ্ছালেহীন হযরত সাইয়্যেদ শাহ্ সূফী জালাল নূরী (রহ:) বাংলা ১২২৮ সালের ৮ই কাতিক জন্মগ্রহণ করেন, বড় ভাই শাহ সূরে হেলালের মত ইনিও কবি এবং নিপুনভাবে বাঁশের বাশী বাজাইতে পারিতেন । গভীর রাতে তাহার বাঁশীর সূরে ভাবুক মনে চরম ভাবের উদয় হইত । উল্লেখ্য হযরত সূরেশ্বরী ক্বিবলা ক্বাবা (রা:) স্বয়ং তাহার জৈষ্ঠ পূত্র হযরত নুরশাহ (রহ:) সাহেবের কাছে বলিয়া ছিলেন, তোমার ঔরসে তৃতীয় সন্তান যে আসিবে তাহার দ্বারা এই দরবারের প্রচার প্রসার এবং শান-শাওকাত বৃদ্ধি পাইবে, আমি তাহার নাম জালাল রাখিয়া গেলাম । 

হযরত সূর শাহ বাবার বেছাল হক্ব লাভা করিবার এক বৎসর আগে ১৯৬০ সনের ২০শে মাঘ মহা পবিত্র উরসের দিনে হযরত নূর শাহ বাবা তাহার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদের সমন্বয়ে দরবারে বসিয়া ছিলেন । হঠাৎ সূরেশ্বরী (রহ:) এর প্রথম শ্রেনীর খলিফা মোকরম আলী দরবেশ নূর শাহ বাবার নিকট বলিলেন “হুজুর, আমি স্বপ্নে দর্শন করিয়াছি যে, স্বয়ং সূরেশ্বরী ক্বিবলা ক্বা’বা হযরত জালাল নুরীর (রহ:) ‘এ মাথায় জরির শিরস্ত্রান পরাইয়া দিতেছেন । ইহা শ্রবণ করত: হযরত নূর শাহ্ ক্বিবলা সমর্থন করেন । অত:পর ঐ মাহফিলেই তিনি হযরত সূরেম্বরী ক্বিবলা ক্বাবার বাতেনী নির্দেশ প্রাপ্ত হইয়া হযরত জালাল নূরী (রহ:) ‘কে বাবা জান ক্বিবলা হযরত সূরেশ্বরী (রহ:) এর বেলায়েত ভান্ডার এবং বেলায়েতের বন্টনকারী ও দরবারের গদীনশীন বলিয়া ঘোষনা করেন। বাবা জালাল নূরী দীর্ঘ ৪৫ বৎসর যাবত গদীনশীন হিসেবে সূরেশ্বরীয়া ত্বরিকার অতিশয় উন্নতি সাধন করেন । সূরেশ্বরী বাবার রওয়াজা পাকের মূল বিল্ডিং সংস্কার করিয়া গম্বুজ নির্মাণ করেন।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত সূরেম্বরী ক্বিবা বাবা জীবদ্দশায় তাহার জৈষ্ঠ পূত্র হযরত নূরী শাহ্ বাবাকে বলিয়াছিলেন যেদিন প্রধান আশা খানি ভাঙ্গিয়া দুই টুকরা হইয়া যাইবে (যাহা হুজুর পুরনুর রাসূলে করিম (স:) এর রুহানিয়াত এর সহিত সম্পৃক্ত) সেদিন এই দরবারের বেলায়েত ও রুহানিয়াত ক্ষমতা স্থানান্তরিত হইবে ।

সূরেশ্বরী ক্বিবলা ক্বা’বার সেই অমোঘ অছিয়ত নামা হযরত নূর শাহ্ বাবার সময়ের শেষ দিকে সংঘটিত হইয়াছিল এবং হযরত জালাল নূরী (রহ:) উহার সংস্কার করিয়াছিলেন  হযরত জালাল নূরী (রহ:) পবিত্র হজুব্রত পালন করিয়াছিলেন । হজ্ব হইতে ফিরিয়া আসিয়া তিনি জিয়ারতে মদিনা “ নামে কবির আর এক কানা কাবাগ্রন্থ রচনা করেন। আশেকে তথা রাসূল প্রেমিকদের জন্যে ইহা একখানি অমূল্য গ্রন্থ । “জীবন কাব্য” নামে কবির আর এক খানা কাব্যগ্রন্থ রচিয়ছে যাহা বাংলা সাহিতে্যর এক অমূল্য সম্পদ । তাহার বিরচিত কাব্যগ্রেন্থ ছন্দ ও লয় আশ্চয্যরকম ভাবে স্থিতি লাভ করিয়া জগৎ সংসারের খুটিনাটি বিষয়কে তিনি তাহার লিখনীতে এমন করিয়া ফুটাইয়া তুলিয়াছেন যাহা নিতান্তই বিরল । আপন কৃতিত্বে  বেলায়েতের পূর্ণ মণি , শামসুল আরেফিন, রফিকুচ্ছালেকীন অলিয়ে মোকাম্মেল লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও মুরিদের মুর্শিদ  ক্বিবলা হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়্যেদ জালাল নূরী (রহ:) আফি আনহু সূরেশ্বর দরবার তথা আশেকানে সূরেশ্বরীদের কষ্ট এবং শোকের দরিয়ায় ভাসাইয়া বাংলা ১৪০৬ সালের ২৫শে ফাল্গুনে ৭৯ বৎসর হায়াত মোবারক লাভ করিয়া বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন ।

তাহার মাজার শরীফ দরবারে সুলতানুল আউলিয়া সূরেশ্বর দ্বায়রা শরীফ ; নড়িয়া, শরিয়তপুর ।

হযরত জালাল নূরী (রহ:) আফি আনহু তার পাঁচ পুত্র সম্পর্কে ‘জীবন কাব্য’ নামক কাব্যগ্রন্থে লিখিয়াছেন —

“পাঁচ পুত্র তিন মেয়ে জালাল নূরীর ,

প্রথম পুত্র কামাল নূরী বড় এ বাড়ির ।

লেখাপড়া এম,এ,পাশ বিশ্ববিদ্যালয় ,

যোগ্যতা সময় মাঝে দেয় পরিচয় ।

দ্বিতীয় বেলাল নূরী শাহ্ মুজাদ্দেদী,

বি-কম ডিগ্রিতে পাশ হয় অগ্রগতি ।

তৃতীয় ইকবাল নূরী বি,এ পাশ করে ,

দরবারের কায্যভার রাখে শিরোপরে ।

চতুর্থ শাহানশাহ নূরী করে এম,এ পাশ,

ব্যবসায় যাত্রা করিছে তালাশ।

দরবারে বিদ্যুৎ বাতি টেলিফোন তার,

তার চেষ্টায় স্থিতি হল অতি চমৎকার ।

পঞ্চম আলম শাহ্ নূরী বি,এ, পাশ করি ,

যোগ্যতার অভিযান করে ধৈয্য ধরি ।

মাইক্রোফোনে সঙ্গীত চর্চা সূরেশ্বরীগান,

উরস দিবস করে নামাজ আযান ।

Loading