পীর মুরিদ 


যদ্যপি হউক জানশরীফ নিশ্চিত।

পাক বলে জানে কহা নহে হরষিত ॥

হাকিকতে আহাম্মদ আলি যে মোকাম।

সাধিতে পারিলে সিদ্ধ হবে মনস্কাম ॥

যে কাজের আরম্ভেতে ফতে নাম হবে।

ফতে বই কোথা হবে পরকাল ভবে ॥

বিছমিল্লার শির পুঁঞ্জি এই ফতে নাম।

ফতে বিনা ফতে নাহি হবে মনস্কাম ॥

আজলেতে সাহা নাম আছিল স্থাপন।

পৃথিবীতে সূফী নাম হইল কীর্ত্তন ॥

আজলে আশেক ব্যাখ্যা ছিল সুবিকাশ।

ভুবনে মাশুক ব্যাখ্যা পাইল প্রকাশ ॥

আজলে মহেব নাম নিজ সিংহাসনে।

মহীতে মাহ্বুব বলে রঞ্জিত বচনে ॥

আজলে আরেফ ব্যাখ্যা ছিল প্রকাশিত।

ভবেতে মারূফ পদে ভুবন রঞ্জিত ॥

আদি মূলে ছিল যথা রূহের বাসর।

সে বাসরে নিজে ছিল খোদ পয়গাম্বর ॥

টাকা সঙ্গে আনা যুক্ত আছিল যথায়।

মধু মদ্যে মিষ্ট ভাব যাইবে কোথায় ॥

বাজারেতে আছে শত মধুর পশারী।

পশারীতে নহে মিষ্ট মধু সারি সারি ॥

যে বলে এমন খালি মুখের পাঁচালি।

নহে কোথা মিষ্ট বিনা গুড় হয় খালি ॥

مولانا روم

 (মাওলানা রোম)

چونكه ذات پيررا كردي قبول –

هم خدا درذات امد هم رسول –

درمدان ودرمبين ودر مخوان –

خواجه رادر خواجه خود محودان –

كر جدا بينى زحق اين خواخثرا –

گم كنى هم منن وهم دبها جه را –

اوليا وانبيا راحق بدان –

سومخفى باتو كر دم من عيان –

دربشر روير ش امد افتاب –

فهم كن والله اعلم بالصواب

 (চুকে জাতে পীরেরা কারদি কবুল।

হাম খোদাদার জাতে আমাদ্ হাম্ রছুল ॥

দোর মাদান ও দোর মোবিন ও দোর মাখোয়ান।

খাঁওয়জারা দর খাঁওজা খোদ মোহ্দান ॥

করে জুদাবিনি জাহক্ব এঁখাওয়াজারা।

গাম্ কুনি হাম্ মানান্ অহাম দিবাজারা ॥

আওলিয়া ও আম্বিয়ারা হক্ব বোঁদান।

র্ছেরে মুখ্ফি বাতো কারদাম মান্ইয়া ॥

দার বাসারো রোয়েরাস আম্দ আফ্তাব্।

ফাহাম্ কুন ওয়াল্লাহু আলাম বেস্ছোয়াব ॥)

যখন কবুল তুমি কৈলে পীর ধন।

তাহাতে প্রভুর জাত আর নবী তন ॥

খাজাতেই রাজা আছে মহা সমুদয়।

দেখ শুন পড় তারে জুদা হেন নয় ॥

নবী অলী হক্ব নামে হক্ব জান তায়।

ভেদ বাক্য প্রকাশিয়া কহিনু তোমায় ॥

মানুষের রূপান্তরে আসিল আফতাব।

বোঝহ খোদার বুঝ অনেক ছওয়াব ॥

কোতব এর্শাদ ছিল মূল পদ যার।

ভবেতে মোর্শেদ নাম হইল প্রচার ॥

জবরুত বাগানে সাহা আছিলেন অলী।

ভবেতে উদয় ভানু সাহে ফতে আলী ॥

উদয় হইতে ভানু তারকা সকল।

আমল আসিতে তারা করে টল টল ॥

উদয় হইতে রাত হইল বিদায়।

আন্ধারে নিদ্রিত ছিল জাগিল সবায় ॥

কিন্তু যে আজলি মরা রহিল স্বপনে।

উদয় হয়েছে ভানু কেমনে সে জানে ॥

উদয় হইয়ে দিন করিয়া রৌশন।

আসিল সামের কাল হইল গোপন ॥

গোপন হইয়া যদি গেল সেই ধনী।

পাইয়া মণির খনি রহে যেয়ে মণি ॥

কিন্তু সে মানিকে বটে চটক অপার।

ছেদিয়া চটক হল খনির বাহার ॥

কিন্তু সে চটক নহে এলাহির নূর।

মাণিকতলা দেল্লিবাগ হইল জহুর ॥

কলিকাতা মণিকতলা দেলওয়ার বাগ।

মাজার গোলজার যিনি রৌশন চেরাগ ॥

আকাশ পর্যন্ত নূর উঠে দীপ্তিমান।

অকাতরে দেখে লোক তাজ্জবে হয়রান ॥

মশাল চৌগুণ নূর হেন পরিষ্কার।

কেহ না দেখিয়া হবে জগত মাঝার ॥

চন্দ্ররূপ হতে অতি দেখিতে সুস্থির।

বাতিরূপ নহে সেই আগুন শরীর ॥

পরলোক হল যবে পৃথিবী ছাড়িয়া।

কবরে এহেন নূর উঠে চমকিয়া ॥

কতবার হেন রূপ হইল প্রকাশ।

দেখিল অনেক যারা ছিল আশ পাশ ॥

এখন পস্তায় লোক হায় কি করিনু।

থাকিতে জীবনে মোরা হায় না চিনিনু ॥

হেলায় পরশ মণি হাত হতে যায়।

হায়রে নছিব মোর মরিলে পস্তায় ॥

লোকান্তরে অকাতরে এই কেরামত।

জীবনেতে কেরামত ছিল শত শত ॥

জ্বীন ও মানুষ্য শিষ্য ছিল অগণন।

দেখিতো শতেক লোক ভাবুক যেজন ॥

এত্তেহাদি তাওয়াজ্জুতে করেন তালিম।

এক তাওয়াজ্জুতে ফল যুগের আজিম ॥

দৃষ্টিপাতে ঝরে পাপ অজুদ বিমল।

কলব দর্পন রূপ জ্যোতে ঝলমল ॥

এক নজরেতে ছিল যুগের হাছেল।

পরলোক হয়ে লোকে করিল কামেল ॥

এখনও ভাবুক যদি জেয়ারতে যায়।

অপূর্ব্ব মাণিক পায় মাণিক তলায় ॥

পেয়ারের গাছ পাশে মেন্দীর তলায়।

পেয়ারে মেন্দীর রঙ্গ ভাবুকে লাগায় ॥

এমন মেন্দীর রঙ্গ পাতার তাছির।

লাগাইবা মাত্র লাগে যেমন আবির ॥

কুসুমের রঙ্গ তার নহে সমতুল।

গন্ধরাজ বিমোহিত সুগন্ধে আকুল ॥

এইসব মেন্দী পাতা হয়ে হরষিত।

সুরেশ্বরে নানাবিধ গাইতেছে গীত ॥

সে গীতে উদাস হয় ভাবুকের মন।

সে ভাবে সতত হয় ভাবের কীর্ত্তন ॥

ভাবুকের সেই মেন্দী লাগাইবা কালে।

পড়েছিল এক বিন্দু লাগানু কপালে ॥

কপালে লাগাতে মেন্দী মাথা ধরে তায়।

সে দরদে কাঁদি আমি করে হায় হায় ॥

সকল ভাবুক চাহে সে মেন্দী লাগাই।

আমি বলি বাঁচি নহে কেমনে ছাড়াই ॥

ছাড়াইতে চাহি বটে লেগে বসে দাগ।

আচম্বিতে সে দরদে ফুটিল দেমাগ ॥

দেমাগ হইল খালি রহে মাত্র খোল।

সেই খোলে রোদনেতে বাজাই তবল ॥

শুনিয়া তবল মম কেহ পেরেশান।

রোদন দেখিয়া কত হাসিয়া হয়রান ॥

আমিও হাসিনু কত কান্দনে আমার।

আমার কান্দনে লোক কান্দে জারে জার ॥

কতেক হাসিনু আমি করে খলখল।

সে হাসনে কাঁদি শুধু চক্ষে বহে জল ॥

সে জলে আগুন জ্বলে ধাঁ ধাঁ ঘোরতর।

সে অনলে জ্বলে যায় সাগর লহর ॥

জ্বলিল সকল জল আর কিছু নাই

কেবল রহিনু আমি একেলা কানাই ॥

তখন ভাবিনু আমি, আমি একজন।

আমি নাহি আমিতে যে, সে আমি কেমন ॥

একা আমি ছিনু আমি হৈনু দুইজন।

দুই আমি একাযুক্তে হনু তিন তন ॥

চতুর্থ আমির মধ্যে যখন আমি যাই।

সব আমি খ্যান্ত দিয়া হইনু কানাই ॥

মোর্শেদ অমর

  একদা বিরলে বসি দুঃখানল মন।

গুরু শোকে সে বাগানে করেছি রোদন ॥

ঝরিছে চক্ষের জল করে ঝর ঝর।

হেন কালে দেখি হেথা এসে এক নর ॥

করুণা বচনে কত করেছে আলাপ।

বিনয় কথনে শত করিছে বিলাপ ॥

হে রাজন মহাজন মম পানে চাও।

দয়া করে অধমেরে ভূবন ত্বরাও ॥

দয়াকর দয়াকর দয়াকর যদি।

দয়াগুণে পার তবে হব ভব নদী ॥

এতই সকালে তুমি ছাড়িবে সংসার।

এ কথার লেশ মনে না ছিল আমার ॥

মস্তক উপরে কভু হাত মারে জোরে।

মাটিতে রাখিয়া শির চারি পাশে ঘোরে ॥

অনেক বেতাবে শেষে দাঁড়ায়ে উঠিয়া।

হেন কালে কেহ যেন আমায় ডাকিয়া ॥

কহিলেন শুন সখা কর না রোদন।

অদেখা আশেক পানে করহ গমন ॥

বল তারে রুজু হয়ে বসে মম পানে।

পিলাব সরাব জাম তাহাকে এখনে ॥

একথা শুনিয়া যাই নিকটে তাহার।

কহি সাবধানে হও রুজু একবার ॥

শুনিয়া পরম কথা হরষিত মনে।

আদবে বসিল গিয়া কবর সামনে ॥

অতীত মিনিট দশ হয়েছিল তার।

জজবাতে এসে সেই হল বেকারার ॥

খুলিল ঝাপটে তার কলবের দ্বার।

যথায় আগুন ধুয়া নিশান তাহার ॥

বেহুঁসী নিশান শুধু সরাবের হয়।

সাগরে নিশান ঢেউ পবনে নিশ্চয় ॥

অতীত কিয়ত কাল জোশ নিবারণ।

আশীর্বাদ দিল কত আমার কারণ ॥

মানসিক রস পরে করিল প্রচার।

শুনিয়া হইল মম সুখের সঞ্চার ॥

দেখিনু বিশেষ জন এই মহীতলে।

পীরহীন পীর পায় মম কৃপা বলে ॥

পীর বিনা হল যেই বিশাল কাতর।

কৃপা বলে পীর ভাই হইলে অমর ॥

জীবন থাকিতে ভাই হইবে আমার।

সত্যমিথ্যা এবে এসে দেখ একবার ॥

যে কেহ অমর গুরু চাহে সাধিবারে।

আহাম্মদি ভাব বিনা পাইবে না তারে ॥

এমন অমর গুরু হয় কদাচন।

মরিয়া দেখায় পথ সে নর কেমন ॥

আসেক বিহনে কোথা হইবে অমর।

না হইবে আসেকে কভু কবর হাশর ॥

ديوان حضرت خواجه معين الدين پشتئ رح

 (দিওয়ানে হযরত খোয়াজা মাইনুদ্দিন চিস্তী (রাঃ)

حساب عمر صد عاقل بمحشر بگذر د يكدم

حساب يكدم عاشق بصد محشر نميگنجد –

 (হিসাবে উমর শোয়াদ আকেল বা মাহ্সার বাগুজারদ ইয়ক্ দম্।

হিসাবে ইয়াকদম্ আসেক বাসোয়াদ মোহাশর নমি গন্জদ্ ॥)

হাসরেতে নিকাসের আমল কিতাব।

এক দমে হবে শত আবেদ হিসাব ॥

আসেকের এক দম, হিসাব যাহাই।

শত হাসরেতে তাহা হবে না সামাই ॥

এস্কের আগুন যার বুকের ভিতর।

দোজখের অনল তথা নহে কার্যকর ॥

প্রভুধন যার মনে করিবে আসন।

শ্মশান ভসান দাহ সব নিবারণ ॥

পীরের কদমে কোথা লাগিবে অনল।

হয় হউক মধু তুল্য বন্ধুর গরল ॥

দেওয়ান ওয়েছি পীর করিল তছনিফ।

আসেকের ভাব আর দেখহে তারিফ ॥

হাসিয়া করিল পীর দেওয়ান হাফেজের।

তাহাতে বুঝিবে ভাব কিবা আসেকের ॥

যে হবে আসেক জন ভাব বোঝে তার।

আসেক না হবে যেই করিবে ইঙ্কার ॥

শতে শতে পাইয়াছে হেন প্রাণ দান।

তুমিও অমর হবে পাইলে সন্ধান ॥

প্রভুর খেলা

খেলে মগ্ন মন সদা চিন্তা কিছু নাই।

কে খেলে এমন খেলা বলিহারি যাই ॥

এই সে মাবুদ খেলা খেলনা লইয়া।

খেলিছে রঙ্গের খেলা ভাঙ্গিয়া চুরিয়া ॥

খেলনা গড়িল কত কতই চুরিল।

তবু কি রঙ্গের খেলে সাধ না পুরিল ॥

তৈয়ার খেলনা যবে চোরহ আবার।

খেলনা বিরহে কত করে হাহাকার ॥

ভাঙ্গিয়া পাঁজর অস্থি হয়ে চুরচুর।

তখন বিনয় করে চরণে প্রভুর ॥

আঁখি নিরখিয়া করে কতেক রোদনা।

দুঃখেতে কাতর হ’য়ে মাটির খেলনা ॥

মাতাপিতা শু’নে তার বিনয় বচন।

অসীম রোদন করে ভাই বন্ধুগণ ॥

রক্ষা কর রক্ষা কর সর্ব্বজনে কয়।

তবু না তোমার মনে দয়া প্রকাশয় ॥

কতই বেতাবে তারা ক’রেছে রোদন।

তবু না হইল দয়া না কর শ্রবণ ॥

শত শত মহানর এই ভূমিতলে।

পতিত হইল তারা কাঁদিয়া সকলে ॥

কাহার বিনয় যদি না করিলে শ্রবণ।

অখিল ভুবন কেনে কহে জগজ্জন ॥

যখন আমার পীর চলে নিজ দেশ।

কত না কাঁদিনু তোরে দিয়া উপদেশ ॥

কত না দুঃখেতে আমি কাঁদি জারেজার।

তবু কি করুণা তুই শুনিলি আমার ॥

কাড়িয়া লইয়া গেলি দরিদ্রের ধন।

কাড়িতে কি এত খুশি হয় তব মন ॥

শিশুকালে, ছিল যবে মাতা দয়াবান।

তখন কাড়িয়া নিলি দুঃখীর পরাণ ॥

তখন কি তোর ঠাঁই নাহিক কান্দিনু।

কাননে, পর্ব্বতে মাঠে নাহিক ভ্রমিনু ॥

পাগল হইয়া আমি ফিরি বনে বনে।

হায় প্রভু সেই দুঃখ নাহি তব মনে ॥

পিতাজন আত্মগণে করিলি বেগানা।

আত্মজন বন্ধুগণ কেহই কার না ॥

এক দুঃখে বাঁচি নহে শত দুঃখ তায়।

সেই দুঃখে পীর দুঃখ কোথা সহা যায় ॥

আছিল ভুবন লক্ষ্য এক গুরুধন।

তাহাকে হরিতে হায় র’লে না বারণ ॥

কাহার বাসরে বন্ধু করিব তালাস।

কাহার মন্দিরে যে’য়ে পাব মন আশ ॥

পাহাড় কানন আদি সাগর লহর।

ঠাঁই ঠাঁই ঢুড়ি তাহে শহর নগর ॥

জঙ্গলে জঙ্গলে ঢুড়ি তাবত কানন।

পাতায় পাতায় ঢুড়ি ছিল যত বন ॥

আকাশ পাতাল আদি সকল ঢুড়িয়া।

রজনী যাপন করি রোদন করিয়া ॥

শুনে সেই হাহাকার ফে’টে যায় বুক।

তবু প্রভু তোর মনে নাহি লাগে দুঃখ ॥

যাহার কাঁদনে করে আকাশ রোদন।

তবু কি বিনয় তার কর না শ্রবণ ॥

পৃথিবীতে জীব-জান যতেক সৃজিলী।

জম দম্ভে চূর্ণ প্রভু কারে না করিলি ॥

নিজে যদি চূর্ণ তুই করিতি আবার।

সাফল্য জনম তবে হইত আমার ॥

কহ দেখি আগেকার আদম সকলে।

কেমনে করিলি নাশ এই মহীতলে ॥

সাত ভূমে সাত জন আদম আছিল।

একে একে তারা এবে কোথায় রহিল ॥

আর ছিল এই ভূমে যতেক আদম।

কাহার আদেশে তারা খাইল গন্দম ॥

শাহান শাহে আলমে হাকিকত গৌহরে একতা মদনে

মারেফৎ রশিদে রাশেদ ও কোতবে এরশাদ হযরত

মাওলানা মোর্শেদানা শাহে ফতে আলী সাহেব মাগফুরের

সন ১২৯৩ সাল মাহে আশ্বিনে ইহধাম পরিত্যাগ সম্বন্ধে বিরহ

…………………………………………………………………………..

মনে আসে আশ্বিন মাসে জুড়িয়া আকাশ।

লক্ষ লক্ষ তারাগণ ছোটে পাশাপাশ ॥

ঝাঁকে ঝাঁকে তারাগণ ছুটিয়া বেড়ায়।

এক দিক হতে তারা আর দিকে যায় ॥

আগত হইতে নিশি লাগাত প্রভাত।

দিকে দিকে তারা খেলা ছিল সারা রাত ॥

ঘর বার আমাদের ছিল আগমন।

ছিল না মনের শান্তি শরীরে বসন ॥

হুতাসে মনের শান্তি নাসিতে কেবল।

নিশি ভর ছিনু সবে যেমন পাগল ॥

অশান্তি হইল মম ধৈর্য্য অনুকূল।

শান্তশীল ছিল মন হইবে আকুল ॥

তার পরে শীঘ্র গতি কলকাতা নগর।

সেবিবারে পীর পদ মন কলেবর ॥

এ বিরসে ধৈর্য্য সহ্য রহিল না আর।

মনে আশা জিজ্ঞাসিব নিকটে পিতার ॥

একদিন জিজ্ঞাসিনু আগে গুরুপিত।

আদেশিবে আশীর্বাদ মন আছে ভীত ॥

এইরূপ কেন দেখি আকাশ মন্ডলে।

শুনি নাই দেখি নাই কভু কোন কালে ॥

নির বাক্য রণ পীর না করিয়া বাণী।

আছু আঁখে চক্ষু হতে নিকলিল পানি ॥

মুহূর্তে রাহুর মেঘ এ চন্দ্র কপালে।

পূর্ণিমাতে দাগ চিহ্ন প্রকাশিল ভালে ॥

অধির হইয়া পুনঃ দেন আশীর্বাদ।

শুন শুন বৎস ধন বিদায় সংবাদ ॥

কেহ না রহিবে ভবে কাজা এলাহির।

যেতে হবে একদিন ত্যাগিয়া শরীর ॥

বন্ধু বিনা রক্ষা যার নাহি এই ভবে।

বন্ধুই বান্ধব তাঁর বোলাইলে যাবে ॥

মিলিবারে বন্ধু সনে মনের বাসনা।

পুরিবে মনের সাধ ঘুচিবে যাতনা ॥

তাই অতি শীঘ্র গতি এক দেল বর।

ত্যাগিবে এ মায়া পুঞ্জ দেখিবে সত্তর ॥

অতএব দূতগণ ফিরিস্তা আল্লার।

খুশির নিশান তোলে মাফিক তারার ॥

লক্ষ লক্ষ দূতগণ তাঁর আগুয়ান।

সেই জন্য দেখ বৎস এইত সম্মান ॥

ভীত পদ দাস কহে করিয়া প্রণাম।

হাফেজ জামাল তাই ত্যাগে এই ধাম ॥

বলে নহে বৎস ধন সে হাফেজ নয়।

দেখিবি ক্ষণেক কালে হইবে প্রত্যয় ॥

একেলা আছিনু দাসে কহেন একেলা।

একেলা সদায় মনে রহে কহা বলা ॥

আশ্বিনের শেষ পক্ষে মোর্শেদ আলম।

প্রকাশিল নরাধমে আল্লার কলম ॥

এ ঋতু হেমন্ত কার্ত্তিক কাল যায়।

আগন আগতে শীত পাইবে না হায় ॥

সমন সংহারে কান্তে করিল গমন।

বাজিলে ছফর ডংঙ্কা হইবে চলন ॥

বাজিলে ছফর ডংঙ্কা কে রহিতে পারে।

আলবেদা আলবেদা নর কহ সমাদরে ॥

এক দুই তিন যায় বিগত আঘন।

না রহিবে বিশ ক্ষেত্রে পৌঁছিলে সমন ॥

আট, নয়, দশ, যায় বিশ আঘণের।

এ দম ভরসা শান্তি হইল আখের ॥

চলিল খোদার বন্ধু নিকটে খোদার।

মুহূর্তে পরাণ পাখী ছাড়িল সংসার ॥

বিশেতে বিষম ক্ষেত্র উপনীত বাস।

কাঁদিয়া অধীর মন হইল তরাশ ॥

কি দেখিলাম কি হইলাম কি হইব আর।

কেমনে জীবিত রব এ ভব সংসার ॥

কোথা হৈতে পেয়েছিনু কোথা চলে যায়।

কোথা হতে দিল দেখা আছিল কোথায় ॥

অহরহ যার সাধ ছিল না বারণ।

সে সাধ ভুলিবে কিসে হইল কেমন ॥

কেমনে চলিলে বন্ধু কে হরিল তোরে।

আসহে আমার নাথ দেখা দাও মোরে ॥

কে নিল হরিয়া হারে এলাহির নূর।

কোথায় ছাপিল হারে নূর কোহে তুর ॥

কেমনে ডুবিল হারে আখেরি ছফিনা।

কোথায় ভাসিয়া গেল গোলজার মদিনা ॥

কে করে গারুব হারে এ নূর বিম্বর।

কে করে বিলোপ হারে চন্দ্র শোভাকর ॥

কি লাগিয়া খসে গেল আকাশের তারা।

কি লাগিয়া লোপ হল নূরাণী ছেতারা ॥

কি কারণে গোম হল আকাশ মন্দির।

কে করিল অন্ধকার নূর এলাহির ॥

আছিল খোদার শান যে শান বান্দার।

কে হরিল সেই শান ভূবন আন্ধার ॥

জাগনে দেখিনু কিবা দেখিনু স্বপন।

জীবিত রহিল কিবা হইল মরণ ॥

মনে বুঝি স্বপন দেখিনু এইবার।

আসিবে আমার পিতা দেখিব আবার ॥

দুচক্ষু মুদিত দেখি নিশির স্বপন।

ভাসিল জোয়ার জলে চক্ষের অঞ্জন ॥

ছুটিল নয়ন তারা চক্ষের পুতলি।

কেমনে হইল লোপ হৃদপিন্ড কলি ॥

অধির হইয়া কাঁদে তোমার বাসনা।

মধু স্বরে কর বাণী খুলিয়া রসনা ॥

কেনে হারে চঞ্চলতা তোমার এমন।

আচম্বিতে কেনে সখা হইলা গোপন ॥

মাতা পিতা ত্যাগে যার সঙ্গের সঙ্গীন।

কেমনে তাহাকে দূরে করে দিলা ভিন ॥

তবে আর এ ভবে কে সারথী আমার।

আহা পিতঃ আহা গুরু সঙ্গে যাব কার ॥

নৈরাশ করিলে কাহে অবোধ ছাওয়াল।

কার আগে দাঁড়াইব অনাথ কাঙ্গাল ॥

বিশাল মধুর বাণী শুনিব কাহার।

হেরিব কমল মুখ কার বারে বার ॥

তবে যদি ভাসাইলে দাসে সমুদ্দুরে।

ধরিতে অনাথ কর, কে কহিল তোরে ॥

মুহূর্তে ভুলিতে যারে না পারি কখন।

চির লোভে কেমনেতে রহিবে গোপন ॥

আস নাথ অনাথেরে দেখা দিয়া যাও।

ধরি করে ধরি গলে ধরি তব পাও ॥

আমার সে সাধ শান্তি কে পুরাবে হায়।

যাইব কাহার আগে বলিব কোথায় ॥

চির তরে দাস আমি হইয়াছি যার।

সেজন ব্যতীত আর কে আছে আমার ॥

যথা রব চিরকাল না হইব ভীন।

ভীনেতে অধীর নহি যায় যাক দিন ॥

কমলের মধু লোভে যারা মধুকর।

কেমনে এই সুধা স্বাদ ত্যাগিবে সত্ত্বর ॥

মধুর কাঙ্গাল অলী ফুলের বাসনা।

তাড়াইলে নাহি যায় বিষাদ যাতনা ॥

যায় যাক প্রাণ যাক পঙ্গ মধুকর।

অনাসে পরাণ বধে দেখিয়া পশর ॥

প্রভাত কামলে রস যারা মধু খায়।

বিভোর অলীর দল তাহারে বোলায় ॥

ওহে পাখী ডাক কিন্তু সুধা বিদ্যমান।

অনিত্য রসের মদে দিছ কি পরাণ ॥

খবর আসে না যার হৈয়াছে খবর।

দাবির আওয়াজে কিহে পাবে দেলবর ॥

اه هرگاه كه در بستان بد ميدگ چه خرش شود دلمن

يگذ ار اى دوست تابوقت بها درسيزه بينى دميده برگل

আহাকি কমল কুঞ্জ হেরি দলে দল।

চমক আকাশ তারা যেন টল টল ॥

কি সাধ হেরিতে আজ ফুলের বাগান।

এস বন্ধু দেখ আজ মম অভিমান ॥

শুয়েছি মাটির তলে কবরে আমার।

ধরিছে মেঘের সাজ ফুলের গোলজার ॥

যে বাগানে যেয়ে আমি লভিতাম ফুল।

সে ফুল আমার কক্ষে করিয়াছে মূল ॥

দেখ এসে তামসিক ফুলের তামাসা।

ক্ষণেকে তোমার কিহে হবে এই দশা ॥

ছিল যাঁরা দেখ তাঁরা কুসুম বিলাস।

কেহ না করিল পূর্ণ ভব অভিলাষ ॥

শত শত অভিলাষী এসেছিল যাঁরা।

এ ভব কুসুম কুঞ্জে রহিছে কি তারা ॥

شنوحافظ بتو گيم كه گل تازه غمى ماند

اگر ماند شبى ماند شى ديگر غمى ماند

পুষ্পধামে পুষ্প তাজা এক রাত রয়।

রেহাফেজ পুষ্প তনু রাতের বিষয় ॥

অন্য রাত পুষ্প রাশি রবেনা গো আর।

এ ভব বাগান তনু পুষ্পের সংসার ॥

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *